অক্ষয়কুমার বড়াল (১৮৬০–১৯১৯)। উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। ১৮৬০ সালে কলকাতায় চোরবাগানে এক সুবর্ণবণিক পরিবারে তাঁর জন্ম। কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে পাঠাভ্যাস আরম্ভ করলেও স্কুলের সীমানা তিনি অতিক্রম করতে পারেননি। পেশা হিসেবে অক্ষয়কুমার চাকরিকে বেছে নেন। স্কুল শিক্ষা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি দূর না এগোলেও আমৃত্যু তিনি জ্ঞান আহরণে ব্রতী ছিলেন। এ হিসেবে তাকে একজন স্বশিক্ষিত মানুষ বলে আখ্যায়িত করা যায়। স্কুল ত্যাগের পর অক্ষয়কুমার দিল্লি অ্যান্ড লন্ডন ব্যাংকের হিসাব বিভাগের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে কয়েক বছর চাকরি করার পর নর্থ ব্রিটিশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে হিসাব সচিব পদে যোগ দেন। এই পদ থেকেই তিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন। হেয়ার স্কুলের ছাত্রাবস্থাতেই অক্ষয়কুমার বাংলা গীতিকবিতার প্রবর্তক বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাঁর কাব্যপ্রেরণাতেই তিনি কবিতা রচনায় মনোনিবেশ করেন। রবীন্দ্রনাথের মতো অক্ষয়কুমার বড়ালকেও বলা হয় ‘বিহারীলালের সাক্ষাৎ ভাবশিষ্য’। বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে তিনি ‘বড়াল কবি’ নামে সুপরিচিত। তার কাব্য রচনার মূল বিষয় ছিল নিসর্গ, সৌন্দর্যবাদ, কল্পনামূলক প্রেম, শোক এবং মানববন্দনা। নারীপ্রেমের শান্তরস তার কাব্যের প্রধান বিশেষত্ব। তাঁর চিন্তাধারা ছিল মার্জিত ও বিজ্ঞানমনস্ক।
অক্ষয়কুমার কাব্য ও নাটক মিলে অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর মধ্যে প্রধান কয়েকটি: প্রদীপ (১৮৮৪), কনকাঞ্জলি (১৮৮৫), ভুল (১৮৮৭), শঙ্খ (১৯১০), এষা (১৯১২), চন্ডীদাস (১৯১৭) ইত্যাদি।
তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থগুলির মধ্যে রাজকৃষ্ণ রায়ের কবিতা (১৮৮৭) এবং গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর অশ্রুমালা (১৮৮৭) উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯১৯ সালের ১৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন।