আগামী ২ অক্টোবর নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে লায়ন্স জেলা ৩১৫-বি৪ এর উদ্যোগে ‘অক্টোবর সেবা’ মাসের কর্মসূচি শুরু হবে বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবের একমাত্র কাজ হচ্ছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। লায়নিজম বিশ্বে সূর্য অস্ত যায় না বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও রাতে দিনে চব্বিশ ঘন্টা কখনো না কখনো কোন না কোন লায়ন সদস্য কোন না কোন সেবাপ্রার্থীকে সেবা দিয়ে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামেও লায়ন সদস্যরা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ান, তাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য কাজ করেন। তারা বলেন, লায়ন সদস্যরা পুরো বছরই সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তবে অক্টোবর সেবা মাস উপলক্ষে এই সেবার মাত্রা নতুন গতি পায়। এবারও পুরো মাসজুড়ে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন ক্লাব শহর বন্দর চট্টগ্রামে নানামুখী কর্মসূচি পালন করবে।
অক্টোবর সেবা মাস উপলক্ষে গতকাল বুধবার দুপুরে জামালখান চিটাগাং সিনিয়রস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামে লায়নিজমের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লায়ন্স জেলা ৩১৫-বি৪ গভর্নর আল সাদাত দোভাষের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সেকেন্ড ভাইস গভর্নর লায়ন এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং এর মাধ্যমে এদেশে লায়নিজমের সূচনা হয়। স্বাধীনতার পর সাবেক মন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী এদেশে লায়নিজমের সূচনা করেন। বর্তমান বিশ্বে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল বছরব্যাপী নানাবিধ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে অক্টোবরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পুরো পৃথিবীতে প্রতিদিন নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। ১৯১৭ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে মানবহিতৈষী বীমা কর্মকর্তা মেলভিন জোন্সের উদ্যোগে অরাজনৈতিক সেবা সংগঠন আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব যাত্রা শুরু করে। এখন বিশ্বে ১৪ লাখের বেশি লায়ন সদস্য পৃথিবীর কোথাও না কোথাও মানবকল্যাণে সেবা কর্ম পরিচালনা করছেন। লায়ন্স ৩১৫-বি৪ চট্টগ্রাম জেলা ৮৪টি ক্লাবের মাধ্যমে ২ হাজার ৬২৬ জন সদস্য দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এছাড়া লায়ন কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি স্বতন্ত্র লিও জেলা বলিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এক হাজার লিও সদস্য ৪৩টি ক্লাবের মাধ্যমে সেবামূলক কাজে লায়নদের সহযোগিতা করছেন।
তিনি বলেন, লায়ন সদস্যরা সমাজের সব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। রাতারাতি সমাজ থেকে সব অভাবী মানুষদের ভাগ্যও বদলাতে পারবে না। তবুও আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ দিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রেস কনফারেন্স কমিটির চেয়ারম্যান লায়ন মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং কমিটির সদস্য সচিব লায়ন হাসান আকবরের সঞ্চালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে সাবেক লায়ন্স জেলা গভর্নর লায়ন রুপম কিশোর বড়ুয়া বলেন, আমরা লায়নরা প্রতিটি সেকেন্ডে পৃৃথিবীর কোথাও না কোথাও সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের সেবা করার জন্য আমরা আছি,্ আমরা থাকবো।
সাবেক লায়ন্স জেলা গভর্নর লায়ন মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের জেলায় চিটাগং লায়ন্স ফাউন্ডেশন চক্ষু চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সে ধারাবাহিকায় আমরা এখন চিটাগং লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট করার স্বপ্ন দেখছি। আমাদের এই ইনস্টিটিউট থেকে অনেক আই স্পেশালিস্ট জন্ম হবে। রোগীদের সেবা দিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রতিষ্ঠান করার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সাবেক লায়ন্স জেলা গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক বলেন, আমরা যারা লায়ন করি কিন্তু সেবা দেয়ার জন্য দায়বদ্ধ। অনেক সময় প্রচার হয়, অনেক সময় হয় না। সে হিসেবে আপনারা অনেক কিছু জানেন, অনেক কিছু জানেন না। আমাদের লায়নদের কাযক্রমের কোনো শেষ নেই। আমরা আমাদের চিত্ত-বিত্তের সমন্বয়ে আমরা লায়ন করি। কিন্তু এমন একটা সময় আসে হয়তো, মানুষের কাছে আমাদের চাইতে হয়, আবার চাইতেও পারি না। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমারা লায়ন্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড করি। লায়নের ছেলে মেয়েদের কথা জন্য চিন্তা করে ফান্ড করেছিলাম। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই করোনা ভয়াবহ রোগ। এখনো করোনা আমাদের ছেড়ে যায়নি। এই করোানার সময় লায়ন-লিওরা যাদের একটু কম বয়স তারা কিন্তু নিজের জীবনবাজি রেখে মানুষকে সাহায্য করার জন্য বস্তিতে ও গ্রামেগঞ্জে ছুটে গিয়েছে। আমাদের অনেক কাজ, বিশেষ করে আমরা অক্টোবর মাসটাকে বেছে নিয়েছি। শুধু বাংলাদেশে নয় ইন্টারন্যাশনালি অক্টোবর মাসে আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি, আরেকজনকে সাহায্য করতে পারছি বলে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পিডিজি লায়ন কামরুন মালেক বলেন, লায়ন গভর্নর হিসেবে আমার সময়কাল ছিল ২০১৯-২০২০। আমরা সময়ে শেষ দিকে করোনা শুরু হয়েছিল। আপনারা জানেন, আমরা যারাই গভর্নর হই,্ আমাদের প্রত্যেকের একেকটা ভিশন থাকে। আমরা যতটুকু আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটা কাজ করে যাই, সে হিসেবে আমি সকল লায়ন ও লিওদের নিয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করেছিলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে আমাদের একটা ফ্লোর দিয়েছি। সেখানে করোনা রোগীদের ৩০ বেডের লায়ন্স করোনা সাপোর্ট সেন্টার গড়ে তুলি। এই করোনা সাপোর্ট সেন্টার পুরো করোনাকালেই চট্টগ্রামের করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় অনন্য ভূমিকা রেখেছে।
পিডিজি লায়ন ডা. শ্রীপ্রকাশ বিশ্বাস আনোয়ারা তাহের ফিজিওথেরাপি চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের নারী এবং পুরুষ বিশেষজ্ঞ সর্বাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে ফিজিওথেরাপি দিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পিডিজি লায়ন এসএম শামসুদ্দিন চৌধুরী, কেবিনেট সেক্রেটারি লায়ন এস এম আশরাফুল আলম আরজু, কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন আবু বকর সিদ্দিকী, প্রেস কনফারেন্স কমিটির ট্রেজারার লায়ন নিশাত ইমরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।