অক্টাভিও পাজ : আধুনিক বিশ্বের কবিকণ্ঠ

| সোমবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

আধুনিক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি অক্টাভিও পাজ। কূটনীতিবিদ ও লেখক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। সৃজনশীলতা ও মননশীলতার মহিমায় মেক্সিকোর এই কবি বিস্তৃত, গভীর ও সমাজ সচেতন শিল্পীমন আর সৃষ্টির নিরঙ্কুশ কুশলতা নিয়ে নিজ দেশের ভৌগোলিক সীমারেখা ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বজনীন। অক্টাভিও পাজের জন্ম মেক্সিকো শহরে ১৯১৪ সালের ৩১ মার্চ। বাবা ছিলেন যশস্বী আইনজীবী। দাদা ঔপন্যাসিক, বুদ্ধিজীবী ও প্রকাশক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন। দাদার সংগ্রহে ছিল মেক্সিকান ও ইউরোপীয় সাহিত্যেও প্রচুর বই। পাজের ব্যক্তিসত্তা ও শিল্পী সত্তায় পারিবারিক পরিবেশের বিশেষ ভূমিকা ছিল। পাজ লেখাপড়া করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোয়। ত্রিশের দশকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রগতিপন্থী লেখকদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে স্পেনে যান তিনি। জীবনের একটা সময়ে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়েছে তাঁকে। নানারকম খুচরো কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে মেক্সিকোর কূটনীতিক সংস্থায় চাকরি নিয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে ভারতে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত ছিলেন। এ সময় ভারতের ‘ক্ষুধার্ত প্রজন্ম’ লেখক গোষ্ঠীর সাথে তাঁর পরিচয় হয়। এই গোষ্ঠীর ওপর পাজের প্রভাব পড়েছিল বিস্তরভাবে। তবে একটি ঘটনায় মেঙিকোর সরকারের আদেশে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে পাজ কূটনীতিকের চাকরিতে ইস্তফা দেন। পাজের কিছু কিছু রচনা মার্কসবাদ, পরাবাস্তবতা ও অস্তিত্ববাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত। মেক্সিকোর অর্থনীতি, রাজনীতি, নৃতত্ত্ব, অ্যাজটেক শিল্প প্রভৃতি বিষয় নিয়েও তিনি লিখেছেন। সম্পাদনা করেছেন ছোট কাগজ ‘প্লুরাল’, ‘বুলেতা’ ইত্যাদি। আর এইসব ছোট কাগজ সম্পাদনায় তাঁর সাথে শামিল হয়েছিলেন মেক্সিকান ও লাতিন আমেরিকান প্রগতিবাদী কবি ও লেখকরা। ১৯৯০ সালে বার্লিন দেয়ালের পতনের পর পাজ এবং বুলেতা ম্যাগাজিনের সদস্যরা মেক্সিকোয় এক সম্মেলনের আয়োজন করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী ও লেখকদের আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলনটি মেক্সিকান টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল। পাজের উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে: ‘দ্য ডবল ফ্লেইম’, ‘চিলড্রেন অব দ্য মায়ার’, ‘ইন সার্চ অব দ্য প্রেজেন্ট’, ‘লুনা সিলভেস্টার’, ‘দ্য কালেকটেড পোয়েমস অব অক্টাভিও পাজ’ ইত্যাদি। তাঁর সৃষ্টির অধিকাংশই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৮ সালের ১৯ এপ্রিল প্রয়াত হন মননশীল কবিপ্রতিভা অক্টাভিও পাজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রমের অচলাবস্থা ও আসন্ন সংকট