আজ অকুতোভয় মানবপ্রেমী, শুধু এগিয়ে চলা এক লোহমানবীর গল্প বলব। যিনি শুধু স্বপ্ন দেখায় আর তা বাস্তবায়নে ঝাপিয়ে পড়ে এবং দেশবাসীর ও তার সহযোগীদের প্রেরণা যোগায় ২০০৯ সালে সিংহাসনে বসার পর মুহূর্ত থেকে তিনি নজর দিয়েছেন দেশের উন্নয়নের প্রতি, অসহায়, লক্ষ লক্ষ দরিদ্র জনগোষ্ঠর সহায়তার প্রতি। দৃঢ় চেতা এই নারী বহুদিনের অন্ধকারের থাকা একটা দেশ ও জাতিকে ২০০৯ সালে থেকে আলোর পথ দেখাতে শুরু করেন। চলাফেরায় সাধারণ নির্ভীক নিরঅহংকারী ব্যক্তিত্ব নিয়ে তিনি অসাধারণ কাজগুলি করে যাচ্ছেন। তিনি একজন নিঃস্বার্থ সেবক। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বিস্ময়ে তার দিকে। ধমক বা উন্নয়নবিরোধী কোনো কিছু তেয়াক্কা না করে তিনি তাঁর পথে হাঁটছেন নির্দ্বিধায়। কারণ তার আছে ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির’। তাইত দেশ আজ উন্নত ও আধুনিক এবং একটা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আজ দেশ উন্নয়শীল দেশের কাতারে হাঁটছে। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে হাঁটছি। তার হাঁটতে চলতে বুঝা যায় যেমন শারীরিক সুস্থতার লক্ষণ তেমন চলনে বলনে দৃঢ়তার লক্ষণ। প্রতি পদে পদে দেশের ভেতরে ও বিদেশীদের চাপ তিনি বিচক্ষণতার সাথে ও ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। দেশের ষড়যন্ত্র ও বাইরের ষড়যন্ত্র তাকে একদম বিচলিত করতে পারে না এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। এটা তার মুখাবয়ব দেখলে বুঝা যায়। তিনি মনে প্রাণে চেয়েছেন বাংলাদেশের উন্নয়ন যেমন রাস্তাঘাট যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন তেমনি দরিদ্রদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ লোকের বাসস্থান করে দিয়েছেন, যাহা অভূতপূর্ব। তিনি সদা সচেষ্ট যেন দেশবাসীর খাদ্যে অভাব না হয়। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি আজ সবার মুখে মুখে। অফিসে যেতে যেখানে তিন ঘণ্টা লাগতো আজ সেখানে ৩০ মিনিটে পৌঁছে যায়। তিনি ২০২০ সালে করোনা মোকোবেলায় সর্বপ্রথম করনো ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেন এবং বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়ে কোটি কোটি জনগণকে রক্ষা করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা মহান ঘটনা। এটা তার দূরদর্শিতার সুফল।
তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশের উন্নয়নে যতগুলো কাজ করেছেন এবং এখনো অব্যাহত আছে– বলে শেষ করা যাবে না। আমরা কী ছিলাম এই ১৫ বছরে কী হয়েছি ভাবলে গা শিউরে উঠে। একটা প্রশান্তির দীর্ঘশ্বাস ভেসে আসে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং দেশকে ধ্বংস করার জন্য যে সব জঙ্গীগোষ্ঠির উত্থান দমন করার জন্য ও তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করার জন্য যে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা অনেক ফলপ্রসু হয়েছে। নচেত দেশ এতদিন ধ্বংস হয়ে যেত। বাস্তব এবং নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করতে গেলে দেশবাসী আজ সবদিক দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। বিশ্বব্যাপী ডলারের মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে অপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিগত দিনে আমরা দেখেছি অবরোধ, হরতাল ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ মানুষের জীবনে নেমে এসেছিল নিদারুণ দুর্ভোগ। ডেলি লেবার থেকে শুরু করে, ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালতে মানুষ কাজ করতে পারে নি। এই নারী নেতৃত্ব শক্ত হাতে সব দমন করেছেন। তার শাসন আমলে একেবারে যে ভুল ক্রটি ছিল না তা নয়। ভুল ক্রটি মানুষের থাকে। যা হয়েছে তাঁর দলের লোকদের দ্বারা হয়েছে। তাঁর সবচেয়ে বিফলতা হলো তিনি দেশকে সফলভাবে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেন নি এবং আরও সুশাসন থাকা উচিৎ ছিল। তাঁর উন্নয়নের সফলতা বলতে গেলে শেষ হবে না। তাঁর মধ্যে দু’একটা উল্লেখ না করলে নয়। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল, কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, অসংখ্য সেতু, বন্দর উন্নয়ন, শাহাজালাল বিমান বন্দরে ৩য় টর্মিনাল, উল্লেখযোগ্য। এই মহীয়সী মহিলার প্রতি মুহূর্ত চিন্তা দেশের উন্নয়ন ও সব ধরনের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করা। এত কোমল হৃদয় মানুষের দুঃখ মৃত্যু দেখলে সহ্য করতে পারে না। তাতে চোখে জল এসে যায়। কারণ তিনি ১৯৭৫ সালে পিতামাতা, ভাইসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। আজ ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধে যে নর হত্যা হচ্ছে। তিনি দেখে খুবই বিচলিত। এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য ধ্বংসযজ্ঞ তাকে ভীষণ বেদনা দেয়। তাই তিনি অকুতোভয়ে দ্বিধাহীনভাবে সেটার নিন্দা জানিয়েছেন। ইসরাইলকে সরাসরি সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করতে গিয়ে এই যুদ্ধে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুসহ অসংখ্য নর নারীর প্রাণহানীর নিন্দা করেছেন এবং শীঘ্রই যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান করেছেন। যেখানে ইসরাইলের বিপক্ষে কেউ কথা বলার সাহস পান না সেখানে তিনি সংসদে নিন্দাপ্রস্তাব এনেছেন। কী নির্মম গাজার সব চেয়ে বড় হাসপাতাল ‘আল–সাফা’ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন সেটা কবরস্থানে পরিনত হয়েছে। আজ তাদের উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসছে না। কোথায় আজবিশ্ব মানবতা। সারা বিশ্বের মুসলিমরা ‘এক উম্মাহ’–কোথায় তারা আজ। এই অকুতোভয় নারীর সর্ব শরীরে, মনে মানব কল্যাণের চিন্তা, ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ তাঁর জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়ে তিনি যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন পৃথিবীর কোনও দেশ এ প্রমাণ দেখাতে পারবে না।
জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সব চেয়ে বেশি সৈন্য পাঠিয়ে একক অর্জন করেছেন। যখন যে দেশে দুর্যোগ ঘটে তিনিই সর্ব প্রথম ত্রাণ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন। কারো চোখ রাঙানোকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তিনি ত্রাণ পাঠান। তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবন ছাত্রাবস্থা থেকে তাই নিজেও অনেক সিন্ধান্ত নিতে পারেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী আল্লাহ তারা দু’বোনকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এবং বাঁচিয়ে রেখেছিল বলেই আজ বাংলাদেশ বেঁচে আছে। আজ বিশ্বনেত্রীর কাতার স্থান করে নিয়েছেন। তার রাজত্ব কাল দীর্ঘতম। পৃথিবীর সব মহিলা প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী তার শাসনকাল। তিনি আর কেহ নন অকুতোভয় বীর মহিয়ষী নারী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লেখক : প্রাক্তন চিফ অ্যানাসথেসিও লজিস্ট,
বাংলাদেশে রেলওয়ে হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।