নয় মাস ধরে নেতৃত্বশূন্য চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল। শুধু মহানগর নয়, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়েও একই অবস্থা। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত করা হয় সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর ও মহানগরের আওতাধীন সকল থানা ও ওয়ার্ড কমিটি। একইদিন ‘শীঘ্রই’ বিলুপ্ত ইউনিটে নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় কেন্দ্র। কিন্তু নয় মাস সাত দিনেও নতুন কমিটি দিতে ‘ব্যর্থ’ হয় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। অবশ্য কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার প্রায় চার মাস পর গত গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মহানগরের পদ প্রত্যাশী ৩২ জনের সাক্ষাৎকার নেয় কেন্দ্র। এরপর পেরিয়েছে আরো চার মাস। কিন্তু নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় যুবদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম শহরে। সাংগঠনিক কাজ না থাকায় সিনিয়র নেতারা সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন পেরুলেও কমিটি ঘোষণা না করায় হতাশ তৃণমূলের কর্মীরা। তারা বলছেন, আগামী বছর নির্বাচন হতে পারে; এমন সম্ভাবনা থেকে মাঠ পর্যায়ে দল গুছানোর নির্দেশনা আছে হাই কমান্ডের। ওই নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে নগর বিএনপি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করছে। আরেক অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলও নগরের ১৫ থানা ও ১২ ওয়ার্ডে আহবায়ক কমিটি দিয়েছে। কিন্তু মহানগর কমিটি না থাকায় ‘শক্তিশালী’ অঙ্গসংগঠন হিসেবে পরিচিত যুবদল নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতি নিতে পারছে না। আবার থানা ও ওয়ার্ড কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক তৎপরতাও কার্যত বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির পদে থাকা এক নেতা আজাদীকে বলেন, কমিটি থাকলে নেতাকর্মীরা সবাই উজ্জীবিত থাকে। সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি থাকে। এটা দলের জন্য ভালো। কিন্তু কমিটি না থাকায় সবাই কেমন জানি প্রাণহীন হয়ে আছে। বিলুপ্ত কমিটির থানা পর্যায়ের এক নেতা আজাদীকে বলেন, গত নয় মাসে কেন্দ্র ঘোষিত কয়েকটি প্রোগ্রাম পালিত হয়েছে। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। কমিটি থাকলে নিজস্ব উদ্যোগে কোনো না কোনো কর্মসূচি পালিত হত। সংগঠন চাঙ্গা থাকত। থানা ও ওয়ার্ড কমিটি থাকলে মহানগরের কোনো না কোনো থানাও ও ওয়ার্ডে দিনে না হলেও সপ্তাহে অন্তত একটি সভা–সমাবেশ হত। এখন সেটা বন্ধ। এদিকে কেন্দ্রীয় যুবদল সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও নেয়াখালী জেলা যুবদলের কমিটি একসঙ্গে ঘোষণার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে সম্ভাব্য নেতৃত্বের একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতি পেলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না আজাদীকে বলেন, কমিটি দ্রুত দেয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। তবে কবে দেয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী আজাদীকে বলেন, কমিটি গঠন সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন যখন উপযুক্ত সময় মনে করবেন তখন কমিটি ঘোষণা করবেন। তবে কমিটি না থাকলেও যুবদলের অসংখ্য নেতাকর্মী কিন্তু নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংগঠনের জন্য কাজ করছেন। কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। পদ–পদবী না থাকলেও দলের প্রতি ভালোবাসা থেকে যুবদলের কয়েক হাজার কর্মী গত মাসে পলোগ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে উপস্থিত হয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। এখান থেকে স্পষ্ট কমিটি না থাকা মানেই সংগঠন ঝিমিয়ে পড়েছে সেটা সঠিক নয়।
নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ আজাদীকে বলেন, কমিটি বিলুপ্ত করার পর চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রোগ্রাম হয়েছে যুবদলের। সর্বশেষ পলোগ্রাউন্ড মাঠে তারুণ্যের সমাবেশ হয়েছে। সেদিন ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে দুপুরের তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে যুবদলের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হয়েছেন। যদি কমিটি না থাকার কারণে হতাশা থাকত তাহলে তারা আসতো না এবং আমাদের অন্যান্য প্রোগ্রামগুলোও সফল হতো না। কমিটি না থাকলেও কেন্দ্রীয় প্রতিটি কমসূচি পালিত হচ্ছে। এতে বুঝা যায় কমিটি না থাকলেও যুবদলের প্রতিটি কমী সাংগঠনিক কাজে উজ্জ্বীবিত। তবে এটা ঠিক পদ–পদবীর প্রত্যাশা সবার থাকে। এখন সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিলুপ্ত কমিটির সহ–সভাপতি সাহেদ আকবর আজাদীকে বলেন, বিলুপ্ত বা সাবেক কমিটির সবাই ঐক্যবদ্ধ। ঐক্য থাকার কারণে কমিটি না থাকারও পরও কেন্দ্রীয় সবগুলো কর্মসূাচ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১ জুন কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল পাঁচ সদস্যের নগর যুবদলের কমিটি। এতে মোশাররফ হোসেন দিপ্তিকে সভাপতি এবং মো. শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। পরবর্তীতে একই বছরের ৪ অক্টোবর কমিটির আকার বৃদ্ধি করে ২৩১ সদস্যে উন্নীত করা হয়। দুই বছরের জন্য গঠিত ওই কমিটি ৬ বছর সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে। দায়িত্ব পালনকালে নগরের ১৫ থানা ও ১৭টি ওয়ার্ডে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বিলুপ্ত কমিটির পূর্বে ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর কাজী বেলালকে সভাপতি ও মোশোরফ হোসেন দিপ্তীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের নগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সংসদ। তবে কমিটি ঘোষণার সাথে সাথেই চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরোধিতায় ঐদিন রাতেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা এই কমিটি স্থগিত করতে নির্দেশ দেন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে ১৯৯৬ সালে গঠিত কমিটি ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।