৯ মাসে ১১ খুন

রাউজান প্রতিনিধি | বুধবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর থেকে আওয়ামী, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মী শূন্য রাউজানে একের পর এক খুনের ঘটনায় মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকার সূত্র সমূহ জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের আমলে প্রবাসী মুছা, ছাত্রদল নেতা নুরুল আলমসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তারা ৫ আগস্ট থেকে এলাকা ছাড়া। এখন তাদের শূন্যস্থান পূরণ করেছে বিএনপির সাইনবোর্ডের আড়ালে থাকা অপরাধীরা। বর্তমানে ঘাঁটি করে থাকা অপরাধীরা দলেউপদলে ভিভক্ত হয়ে চাঁদাবাজি, মাটি ও বালুর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে খুনখারাবিতে জড়িত হয়ে পড়েছে। এসবের ধারাবাহিকতায় গত ৯ মাসে এই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খুন হয়েছেন ১১ জন। এসময় পক্ষবিপক্ষ সংঘাত সংঘর্ষ ও পিটুনিতে আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক।

এলাকার লোকজনের মতে, ৫ আগস্টের পর থেকে এই পর্যন্ত যত খুন হয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগ সংঘর্ষ সংঘাত ও খুনের নেপথ্যে রয়েছে বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল। চাঁদাবাজি, মাটি, বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিযোগিতায় গিয়ে হচ্ছে এত খুনাখুনি ও সংঘাতসংঘর্ষ।

চলমান এই পরিস্থিতির সর্বশেষ শিকার হয়েছেন রাউজান সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী পাড়ার মোহাম্মদ আলমের ছেলে ইব্রাহীম (৩৫)। স্থানীয়রা বলেছেন, ২২ এপ্রিল দুপুরে ঘর থেকে কৌশলে তাকে মোবাইলে ডেকে এনে গুলি করে হত্যা করে পালিয়েছে খুনিরা। এই ঘটনার দুদিন আগে (শনিবার) দিবাগত রাতে স্বদলীয় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ রাউজানের একটি কলোনিতে ভাত খেতে বসা যুবদল কর্মী আবদুল্লাহ মানিককে মুখের ভিতর বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করে মারে।

স্থানীয় জনসাধারণ বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর রাউজানে হত্যাকাণ্ডের প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল গত সেপ্টেম্বর শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুল মান্নানকে (২৭) পিটিয়ে মারার মাধ্যমে। তাকে রাঙ্গুনিয়ার সুগারমিল এলাকা থেকে ধরে এনে পিটিয়ে মারা হয়েছিল রাউজান রাবার বাগানের কাছে। ১ সেপ্টেম্বর ইউছুপ মিয়া নামের এক দিনমজুরকে পিটিয়ে মেরে লাশ ফেলা হয়েছিল সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাগান বাড়ির ভিতর। অজ্ঞাত কারণে ১১ নভেম্বর নিখোঁজের তিনদিন পর খালে লাশ পাওয়া যায় চিকদাইর ইউনিয়নের হাফেজ মাওলানা আবু তাহের (৪৮) নামের এক ব্যক্তির। ২৪ জানুয়ারি দক্ষিণ রাউজানের নোয়াপাড়া নিরামিশ পাড়ায় একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসীর ব্রাশ ফায়ারে খুন হন ওই এলাকার দানশীল ব্যক্তি চট্টগ্রাম নগরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হাজী জাহাঙ্গীর আলম। অভিযোগ আছে চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে হত্যা করা হয়।

১৯ ফেব্রয়ারি একই ইউনিয়নে মুহাম্মদ হাসান (৩৫) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে ঘর থেকে তুলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১ মার্চ রাউজানের হলদিয়ায় জায়গার বিরোধ নিয়ে ভাইদের হাতে খুন হন প্রকৌশলী নুরুল আলম। ১৫ মার্চ একই ইউনিয়নের আমীর হাটে স্বদলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা কাটাকাটির মধ্যে খুন হন প্রবাসী করম উদ্দিন জিতু। ২১ মার্চ উপজেলার পূর্বগুজরা ইউনিয়নের হোয়াড়া পাড়ায় গরু চুরির অভিযোগে পিটিয়ে মারা হয় মো. রুবেল (৩৫) নামে এক যুবককে। ১৭ এপ্রিল পাহাড়তলীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুকুরে পাওয়া যায় জাফর নামের স্থানীয় এক রিকশা চালকের লাশ।

স্থানীয় সূত্র সমূহ দাবি করেছে, এ সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আরো অন্তত ২০টির মত গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে মারার চেষ্টা হয়েছে আরো ১০ জনকে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে দাবি করা হয়, গত ১৭ বছর যাবত দখলদার আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কারণে যারা নির্বাসিত ছিল তাদের অনেকেই রাউজানের রাজনীতিতে বিভক্তির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হয়েছে। তাদের কেউ বলছে সাবেক সংসদ সদস্য দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী, আবার কেউ বলছে সাবেক সংসদ সদস্য চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের পক্ষের। বিএনপির নেতৃবৃন্দের দাবি, যারা অপকর্মে জড়িত কারো বিএনপি যুবদলের পদপদবি নেই। দুই নেতা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপ-সীতাকুণ্ড নৌরুটে থাকছে ফেরি সামনে যুক্ত হতে পারে সি-ট্রাকও
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি আনতে নতুন উদ্যোগ