আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের প্রথম সভায় ৯ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের অনুপস্থিতির কারণে মুলতবি করতে হয়েছে গত বৃহস্পতিবারের প্রথম দিনের সভা। সভায় না গিয়ে শহরে অবস্থান নেয়া, নিরাপত্তার অজুহাতে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতার প্রশ্ন উঠেছে– এমন কর্মকাণ্ডে আসলে কার লাভ, কার ক্ষতি হচ্ছে? এমন প্রশ্ন আনোয়ারার সচেতন মহলে।
সভা বর্জন করা ৯ চেয়ারম্যান বলছেন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় তারা প্রথম সভায় যাননি। অপরপক্ষ বলছে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতেই তাদের এই কৌশল। যা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ পরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক। পরিষদে ফলপ্রসূ বৈঠক করা না গেলে উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে। এতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ।
আনোয়ারা উপজেলার ১১ চেয়ারম্যানের সবাই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী। নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী। ১১ ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে একটি চেয়ারম্যান পদ শূন্য। বাকী ১০ জনের একজন পরিষদের সভায় যোগ দেন। ৯ জন বর্জন করেন নতুন চেয়াম্যানের প্রথম সভা।
সূত্র জানায়, বর্তমানে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান, ১১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এর বাইরে ১১ ইউনিয়নের ৩৩ জন মহিলা ইউপি সদস্যদের মধ্য থেকে চার জনকে পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হবে। এরপর পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮ জন।
নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিষদের মাসিক (সমন্বয়) সভা আহ্বান করে থাকেন। সভায় ৫০ শতাংশ সদস্য (কোরাম) উপস্থিত হলেই সভার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। যদি অর্ধেক সদস্য সভায় উপস্থিত না হন সেই ক্ষেত্রে পরপর তিনবার মুলতবি সভা আহ্বান করা যাবে। আবার পরিষদের সদস্যরা যথাযথ কারণ ব্যতীত পরপর তিন ৩ সভায় উপস্থিত না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা (সদস্য পদ শূন্য) নেয়ার বিধানও রয়েছে। প্রতি মাসে উপজেলা পরিষদের একবার সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বা ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন হয়। পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সুযোগ নেই।
জানা যায়, সাধারণ সভায় কোরাম পূর্ণ না হলে উন্নয়ন প্রকল্প বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয় না। প্রশ্ন উঠেছে চেয়ারম্যানরা সভায় না গেলে তাদের এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাধাগ্রস্ত হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ।
উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, নিজের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ইউপি চেয়ারম্যানদের উপজেলা পরিষদে আসতে হবে। আমি সবসময় অংশ গ্রহণমূলক ও জবাবদিহি প্রশাসনের কথা বলেছি। আমার কমিটমেন্ট সবসময় ধরে রাখব। ৯ চেয়ারম্যান ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছেন। এর পেছনে কী উদ্দেশ্য তারা ভালো জানেন। জনগণ তাদের এসব কর্মকাণ্ড বুঝে গেছে। সত্যিকার অর্থে তারা জনপ্রতিনিধি হলে আগামী সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে আশা রাখি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমন বলেন, সব চেয়ারম্যানকে চিঠি ও ফোনের মাধ্যমে উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছিল। তাদের কিছু বলার থাকলে সভায় এসে বলতে পারতেন। আগামী ২৭ জুন পরবর্তী মুলতবী সভা হতে পারে বলে তিনি জানান।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহম্মদ বলেন, আনোয়ারার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে। আইনশৃংখলার বিষয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের বক্তব্য একান্ত নিজস্ব। সবকিছু স্বাভাবিক আছে, আমি নিজেও পরিষদের সভায় উপস্থিত ছিলাম। নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না।
বৈরাগ ইউপি চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, যেহেতু নির্বাচন পরবর্তী আমাদের ওপর হামলা হয়েছে, আমাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য নিরাপত্তার কারণে প্রথম সভায় আমরা যাইনি। পরিবেশ তৈরি হলে পরবর্তী সভায় যাব।
বরুমচড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ঠিকই আছে। ৯ চেয়ারম্যান একটি খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন।