কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনের ৫৫৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে নব্বই শতাংশই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। বিশেষ করে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে গঠিত কক্সবাজার–২ আসনে শতভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ৪টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী রয়েছেন ২৬ জন। এরমধ্যে কক্সবাজার–১ আসনে ৭ জন, কক্সবাজার–২ আসনে ৬ জন, কক্সবাজার–৩ আসনে ৬ জন ও কক্সবাজার–৪ আসনে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ৪ আসনে মোট ভোটার ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬০ জন। এর মধ্যে অন্তত ৪ লাখ সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন বলে জানা গেছে। অধিকাংশ সংখ্যালঘু ভোটারের বসবাস কক্সবাজার পৌরসভা, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামু ও চকরিয়া উপজেলায়।
কক্সবাজার–১ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৫২ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৫৮টি। এরমধ্যে পেকুয়া উপজেলায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৪টি। যার মধ্যে ২২টিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও বাকী ২২টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলায় ভোটকেন্দ্র আছে ১১৪টি। এর মধ্যে ৯৬টিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ১৮টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার–১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনে প্রার্থীরা হলেন– স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম (ট্রাক), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম (হাতঘড়ি), ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির হোসনে আরা (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামীক ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি জাফরের পুত্র তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুদ্দিন আরমান (কলারছড়ি)।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপির মনোনয়নপত্র ঋণ খেলাপির অভিযোগে বাতিল করা হলে পরে সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়।
কক্সবাজার–২ (মহেশখালী–কুতুবদিয়া) আসনে ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৩৮ জন, ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১১৮টি। এরমধ্যে মহেশখালীর ৮১টি ভোট কেন্দ্রের সবকটি কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং কুতুবদিয়া উপজেলার ৩৭টি কেন্দ্রের সবকটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার–২ আসনে প্রার্থীরা হলেন– আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা), বিএনএম এর প্রার্থী শরীফ বাদশাহ (নোঙ্গর), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ইউনুস (মিনার), ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মোহাম্মদ খায়রুল আমীন (একতারা), বাংলাদেশ ন্যাশালিস্ট পার্টির (এনপিপি) মাহবুবুল আলম (আম)।
কক্সবাজার–৩ (সদর–রামু–ঈদগাঁও) আসনে ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬১০ জন, ভোটকেন্দ্র ১৬৭টি। এর মধ্যে রামুতে ৬৪টি, কক্সবাজার সদরে ৭৬টি ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি ভোটকেন্দ্র। এসব ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৯০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার–৩ (সদর–রামু–ঈদগাঁও) আসনে প্রার্থীরা হলেন– আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল (নৌকা), জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির শামীম আহসান ভুলু (কুড়েঁঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ (ঈগল)।
কক্সবাজার–৪ (উখিয়া–টেকনাফ) আসনে ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১ জন, ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১০৪টি। এরমধ্যে টেকনাফের ৫৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং উখিয়ার ৪৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪টিকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার–৪ আসনে প্রার্থীরা হলেন– আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন চৌধুরী ভুট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গণি চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর (ঈগল)।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, কক্সবাজারের চারটি আসনের সব কটি কেন্দ্রকেই বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই কিংবা কোনো ধরনের গোলযোগের সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।