চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধিগ্রহণকৃত ভূ–সম্পত্তির পরিমাণ ৮০.৮৩৬ একর। তবে ডিজিটাল সার্ভে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে ৭২.৪২০ একর। বাকি ৮.৪১৬ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। বেদখল হওয়া এই জমির মূল্য আনুমানিক ৮শ কোটি টাকা’ যা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মর্মে ২০১৫–১৬ অর্থবছরে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বর্তমান হিসেবে এই মূল্য আরো বেশি হতে পারে। ৮ একরেরও বেশি জায়গা বেদখলে রয়েছে বলে স্বীকার করে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার ও চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলছেন– বেদখল হয়ে যাওয়া এসব জায়গা উদ্ধার করা জরুরি। কিন্তু কাগজপত্র ও আইনগত বিষয় জড়িত থাকায় এ কাজ জটিল হয়ে পড়েছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি।
কলেজ ও হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চট্টেশ্বরী সড়কের গোঁয়াছি বাগান ও তৎসংলগ্ন এলাকার বিস্তৃত জায়গা বেদখল হয়েছে। অনেকেই দীর্ঘ বছর ধরে বাসা–বাড়ি বানিয়ে এসব জায়গা দখল করে রেখেছেন। বেশ কয়টি বহুতল ভবনও গড়ে তোলা হয়েছে। বেদখল হওয়া এসব জায়গা উদ্ধারে চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণে গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও। কিন্তু ওটুকুই। সীমানা নির্ধারণ বা বেদখল জমি উদ্ধারে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অবৈধ দখল থেকে ভূমি রক্ষায় ও সীমানা নির্ধারণে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চমেক উপাধ্যক্ষ, চমেক হাসপাতালের উপ–পরিচালক ও চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এ এইচ এম জিয়াউদ্দিনকে সদস্য রাখা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল ব্যবস্থাপনা কমিটির ফের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচনা পরবর্তী অবৈধ দখল থেকে ভূমি রক্ষায় হাসপাতালের সীমানা নির্ধারণে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমাদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সভা সঞ্চালনা করেন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।
তবে দুই মাসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো পর্যন্ত এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি কমিটি। এরই মাঝে চলতি বছরের ১ এপ্রিল ব্যবস্থাপনা কমিটির ৮ম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) নেতৃত্বে চার সদস্যের আরো একটি উপ–কমিটি গঠন করা হয়। ওই বৈঠকেও ভূমি সংক্রান্ত কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ, করণীয় ও দায়িত্ব বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য পুনরায় অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ওটুকুই। এরপর কমিটির কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
চমেক উপাধ্যক্ষ ওই কমিটির একজন সদস্য। বর্তমান উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. হাফিজুল ইসলাম গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে দায়িত্বে আছেন। তবে এখনো পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কমিটির কোনো সভা বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন উপাধ্যক্ষ ডা. হাফিজুল ইসলাম। যদিও বার্ন ইউনিটের জায়গা সংক্রান্ত এক কমিটির বৈঠকে তিনি অংশ নেন বলে জানান।
ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক বৈঠকে অবৈধ দখলে থাকা জায়গা উদ্ধার ও সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার বলছেন, এখানে ডকুমেন্ট যোগাড়ের বিষয় রয়েছে। আইনগত বিষয়ও রয়েছে। আমাদের আইনি সহায়তা দরকার। কিন্তু এসবের জন্য আমাদের আলাদা কোনো ফান্ড নেই। এটাও একটা সমস্যা। সবমিলিয়ে কিছু জটিলতা রয়ে গেছে।
তবে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র যোগাড় করছেন বলে জানালেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। হাসপাতাল পরিচালকের দাবি– এরইমধ্যে ১৯৫৬ সালের কিছু কাগজও আমরা যোগাড় করতে সক্ষম হয়েছি। আরো কিছু ডকুমেন্ট যোগাড়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ভালো অগ্রগতির খবর দেয়া সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চমেক ও হাসপাতালের এসব জায়গার বিষয়ে গণপূর্তেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। তাই বেদখলে থাকা এসব জায়গা উদ্ধারে গণপূর্তেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।