ঢাকা–চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া–লাকসাম ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইনের কাজ আগামী জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে। এই রেলপথ ডাবল লাইন হয়ে গেলে ঢাকা–চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার পথের পুরোটাই ডাবল লাইন হয়ে যাবে। ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন হওয়ার পর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে কয়েকটি নতুন ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের।
এদিকে পূর্বাঞ্চলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উন্নত প্রযুক্তির ১৫০টি মিটারগেজ কোচ আমদানি করা হচ্ছে। এসব কোচ দিয়ে ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে দুটি বিরতিহীন ট্রেন চালুর জন্য পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই রুটেসহ (ঢাকা–চট্টগ্রাম) আরো কয়েকটি রুটে বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েছেন।
১৭ মে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন আখাউড়া–আগরতলা ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রেলের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আরো চার–পাঁচটি নতুন ট্রেন দেওয়া হবে। আগামী জুলাই মাসে আখাউড়া–লাকসাম ডাবল লাইন সম্পূর্ণ হবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল লাইন হয়ে যাচ্ছে। এটা হয়ে গেলে নতুন যে মিটারগেজ কোচ এসেছে সেগুলো সংযুক্ত করে বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন চালু করা হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমির উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে দুই চালানে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৪০টি কোচ এসেছে। প্রথম চালানে ১৫টি এবং দ্বিতীয় চালানে ২৫টি কোচ এসেছে। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট কোচগুলো আসবে। নতুন ট্রেন চালুর জন্য কোচ ও ইঞ্জিন সংকট নেই বলে জানান পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
ঢাকা–চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ১১৮ কিলোমিটার পথ আগে থেকেই ডাবল লাইন আছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে আরো ১৩১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজ লাইনে উন্নীত করার জন্য ‘লাকসাম–আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্প’ নেয়া হয়। ৮ বছর ধরে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী জুলাই মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা–চট্টগ্রাম পুরোটাই ডাবল লাইন হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে দুটি বিরতিহীন ট্রেন পরিচালনার ব্যাপারে গত জানুয়ারিতে রেল ভবন থেকে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছিল। এর ভিত্তিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্তৃপক্ষ একটি সময়সূচি তৈরি করেছিল। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার আজাদীকে বলেন, নতুন ১৫০টি মিটারগেজ কোচ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসছে। এসব কোচ দিয়ে কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালানো হবে। একই সাথে ঢাকা–চট্টগ্রামসহ অন্যান্য রুটেও নতুন ট্রেন চালু হবে। তিনি জানান, দুই অর্থবছরে মোট ১৫০টি কোচ আসবে। চলতি অর্থবছরে আসবে ৫০টি এবং আগামী অর্থবছরে আসবে অবশিষ্ট ১০০ কোচ।
রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০–২০২১ সালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বহরে যুক্ত হয়েছে দেড়শটি মিটারগেজ কোচ। ২০২১ সালে এসেছে নতুন ৩০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুটি বিরতিহীন ট্রেনের রেক (একাধিক কোচ, ইঞ্জিন মিলে একটি রেক) দিয়ে তিন জোড়া ট্রেন চালানোর উদ্যোগ অনেক আগেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। তখন ইঞ্জিন–স্বল্পতা ও জনবল সংকটের কথা বলে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে নতুন কোচ আসছে, ইঞ্জিনও এসেছে। এখন আগের মতো ইঞ্জিন ও কোচের সংকট নেই। তিনি জানান, ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে আরো দুটি বিরতিহীন ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে টিকিট সংকট দূর হবে। সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম–ঢাকা রুটে এখন ৬ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে মহানগর এক্সপ্রেস ১৯৮৫ সালে, মহানগর গোধূলী ১৯৮৬ সালে, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ১৯৯৮ সালে, তূর্ণা এক্সপ্রেস ২০০০ সালে এবং ২০১০ সালে চট্টলা এক্সপ্রেস চলাচল শুরু হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এই রুটে যুক্ত হয় বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন সোনার বাংলা। এছাড়া চট্টগ্রাম–চাঁদপুর রুটে বিকাল ৫টায় মেঘনা এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এই রুটে আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।











