৭০ জেলে নিখোঁজ, পাঁচ মরদেহ উদ্ধার

কক্সবাজারে প্লাবিত এলাকা থেকে নামছে পানি, ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন

কক্সবাজার ও বাঁশখালী প্রতিনিধি | রবিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

বৃষ্টিপাত কমায় কক্সবাজারে প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এতে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ফিশিং ট্রলার এখনো ফিরেনি। ফিশিং ট্রলারগুলোর অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তারমধ্যে ৫ জনের মরদেহ সাগরের উপকূলে ভেসে এসেছে। গতকাল শনিবার সৈকতের নাজিরার টেক, কলাতলী, পাটুয়ার টেক ও পেঁচারদ্বীপ পয়েন্টে এসব জেলের মরদেহ ভেসে আসে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ থাকা এসব ট্রলার ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু জেলে সাঁতার কেটে উপকূলে ফিরেছে। উদ্ধার হয়েছে ৫ জনের মরদেহও। ফলে এসব ট্রলারের আরও অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

ভেসে আসা জেলেদের মরদেহের মধ্যে চারজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন, বাঁশখালী উপজেলার শেখেরকিল এলাকার নুরুল আমিন (৪০), একই উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল করিম (৩৫), চকরিয়ার রাজাখালী এলাকার মো. হোছাইন (৩২) ও লোহাগাড়া উপজেলার চরমবা এলাকার মোহাম্মদ জালাল (৩৭)। জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, কক্সবাজারে ৮টি ফিশিং ট্রলারে আরও ৭০ জন মাঝিমাল্লা রয়েছে। নিখোঁজ ট্রলারগুলো হলোএফবি হাসান, এফবি আবছার, এফবি সাবিত, এফবি মায়ের দোয়া, এফবি কায়সার, এফবি আব্দুল মালেক, এফবি আঁখি, এফবি তাহসিন, এফবি বাবুল, এফবি নাছির, এফবি সেলিম, এফবি নজির ও এফবি জনি। তারমধ্যে ৮টি ট্রলার কলাতলী ও উখিয়ার ইনানীর পাটোয়ারটেক পয়েন্টে ভেসে এসেছে। সেখান থেকে তিন শতাধিক জেলে জীবিত উদ্ধার হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২১০ মিলিমিটার। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা কক্সবাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। গতকাল থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা এবং মার্কেট এলাকা থেকে নেমে গেছে পানি। শহরের প্রধান সড়কের বাজার ঘাটা, বড় বাজার, মাছ বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী এলাকা থেকেও পানি নেমে গেছে। তবে শহরের সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনার ডেইল, নুনিয়াছড়াসহ ৮টি নিম্নাঞ্চল এখনও পানিবন্দি রয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় হোটেল মোটেল জোনে পানি নেমে গেছে। তবে বৃষ্টি হলেই এখন আতংক তৈরি হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নালা উন্নত করা না হলে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।

উখিয়া উপজেলা ৪০টির বেশি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়াপালং ও জালিয়া পালং ইউনিয়নে। এই দুই ইউনিয়নের ৩০ টি গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ গত দুই দিন ধরে পানির নিচে বসবাস করছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না হচ্ছে না অধিকাংশ ঘরে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভির হোসেন জানিয়েছেন, বন্যায় কবলিত এলাকার মানুষের জন্য জেলা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমেও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন টেকনাফ ও উখিয়ায় অন্তত ১০০ গ্রামের মানুষ। টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, বাহারছাড়া ও সাবরাং ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছিল। প্লাবিত এলাকায় পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, টেকনাফে ১২৫০ জন মানুষকে ইতোমধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ টন চাল। এছাড়া আরও ১৬০০ প্যাকেট বিস্কুট দেওয়া হবে।

বাঁশখালী : বঙ্গোপসাগরের ঝড়ো কবলে পড়ে বাঁশখালীর শেখেরখীল এলাকার আবদুল খালেক কোম্পানির মালিকাধীন আল্লাহর মালিক ফিশিং বোটটির নিখোঁজ ৩ জেলের লাশ উদ্ধার করে শনিবার দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে আবদুর নুর মাঝি ও মো. নুরুল আমিনের লাশ শনিবার সকালে ও বিকেলে পৃথক জানাযা শেষে শেখেরখীল টেকপাড়া এলাকায় দাফন করা হয়। অপরদিকে চকরিয়ার রাজাখালী এলাকার মো. হোছাইনের নিজ বাড়ি দাফন করা হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার প্রভাব বিদ্যুতে
পরবর্তী নিবন্ধছাত্র আন্দোলনে শহীদ তিন পরিবারের পাশে নতুন জেলা প্রশাসক