রাঙামাটিতে পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাজারফান্ড কর্তৃপক্ষ নবনির্মিত তিনটি মার্কেট ভবন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ৬ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে এ তিনটি মার্কেট নির্মিত হয়। মার্কেটগুলো হলো– বাঘাইছড়ি উপজেলার মাহিল্যা বাজারের মার্কেট, রাজস্থলী বাজারের মার্কেট ও ঘিলাছড়ি বাজারের মার্কেট।
মার্কেটের দোকান স্থানীয়দের কাছে বরাদ্দ না দেওয়ায় জনকল্যাণে তৈরি তিনটি মার্কেট কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় ক্রমাগত নষ্ট হচ্ছে ৬ কোটি টাকায় নির্মিত এ তিন স্থাপনা। যদিও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, দোকান বরাদ্দের জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও স্থানীয়রা আগ্রহ দেখাননি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙামাটি জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাজার ফান্ডের আওতাভুক্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মার্কেট ভবন নির্মাণ কাজ হাতে নেয় এলজিইডি। এরমধ্যে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার রাজস্থলী বাজারের মার্কেট ভবন নির্মাণে ২ কোটি টাকা, নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি বাজারে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, বাঘাইছড়ি উপজেলার মাহিল্যা বাজারে ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্যা বাজারে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং কাউখালী উপজেলার চায়েরী বাজারের মার্কেট ভবনে ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ শফি বলেন, ‘স্থানীয় মানুষের সুবিধার্থে এসব বাজারের মার্কেট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঘাইছড়ি উপজেলার মাহিল্যা বাজারের মার্কেট ভবন জেলা পরিষদের বাজার ফান্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই বছর ডিসেম্বরে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা রাজস্থলী বাজারের মার্কেট ভবনটিও হস্তান্তর করা হয়। ১ লাখ ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘিলাছড়ি বাজারের মার্কেট ভবন ২০২৩ সালের মে মাসে বুঝিয়ে দিয়েছি। এসব মার্কেট ভবনের দোকান এখনো স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে জেনেছি।’
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাজারফান্ডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘মার্কেট ভবনের প্লট বরাদ্দের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে কেউ প্লট নেয়ার জন্য আগ্রহ দেখায়নি।’
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, বাজারফান্ডের দোকান বরাদ্দে বেশি টাকা জামানত ধরা হয়েছে। ভাড়াও তুলনামূলক বেশি। উপজেলা ও গ্রামীণ পর্যায়ে বেশি জামানত ও ভাড়া দিয়ে দোকানের প্লট বরাদ্দ নিলে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি গুণতে হতে পারে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাজারফান্ড প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান সহকারী অসিত চাকমা বলেন, ‘আমাদেরকে রাজস্থলী, ঘিলাছড়ি ও মাহিল্যা বাজারের মার্কেট ভবন হস্তান্তর করেছে এলজিইডি। এ মার্কেট ভবনগুলোতে প্লট বরাদ্দের জন্য বেশ কয়েকবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখায়নি। দোকান বরাদ্দে ভাড়া ও জামানতের টাকা কম নির্ধারণ করার জন্য সম্প্রতি বেশ কয়েকজন আবেদন দিয়েছেন। আগামী জানুয়ারিতে একটা মিটিং আছে। মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।’
এদিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও বাজারফান্ড কমিটির আহ্বায়ক রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আমি সবেমাত্র দায়িত্বগ্রহণ করেছি। বাজারফান্ড ও মার্কেট ভবন বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। তবে স্থানীয় জনগণের স্বার্থে বা জনকল্যাণে যা যা করার প্রয়োজন সে বিষয়ে আমি যত্নবান থাকব।’