প্রায় ৫ বছর পর সেন্টমার্টিন উপকূলে ধরা পড়ল বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে সুন্দরতম মাছ হিসাবে পরিচিত সী–হর্স বা ঘোড়া মাছ। গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের একদল গবেষক সেন্টমার্টিনের উপকূলের নিকটবর্তী ফিশিং জোনে জেলেদের মাধ্যমে জাল ফেলে মাত্র একটি ঘোড়া মাছ দেখতে পান।
ধ্রুপদী নৃত্য এবং রাজকীয় ও কাব্যিক জীবন ধারার কারণে বিশ্ববিখ্যাত এ সামুদ্রিক মাছটি একসময় সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া উপকূলে ব্যাপকভাবে ধরা পড়লেও সাম্প্রতিককালে এর তেমন দেখা মিলছিল না বলে জানান সমুদ্রবিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, ঘোড়া মাছ বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। সেন্টমার্টিনে গত ৫ বছর পর প্রথমবার ঘোড়া মাছ দেখা গেল। এছাড়া কয়েকদিন আগে সেন্টমার্টিন উপকূলের বঙ্গোপসাগরের তলদেশে স্কুবা ডাইভিং করার সময় জিয়াউল হক নামের এক পেশাদার স্কুবা ডাইভার এর ক্যামেরায়ও প্রবাল প্রাচীরের কাছে একটি ঘোড়া মাছ এর দৃশ্য ধরা পড়ে বলে জানান দেশের বিশিষ্ট স্কুবা ডাইভার শরীফ সরওয়ার।
তিনি বলেন, আমি গত ১২ বছর ধরে সেন্টমার্টিন উপকূলে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে প্রবাল প্রাচীরের দৃশ্য ধারণের জন্য স্কুবা ডাইভিং করছি। কিন্তু মাত্র দুইবারই আমার ক্যামেরায় সী–হর্স বা ঘোড়া মাছ এর দৃশ্য ধরা পড়েছে।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, আমি ২৭ বছর ধরে ফিশারীঘাটে মৎস্য ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু একসময় ফিশারীঘাটে প্রচুর পরিমাণে ঘোড়া মাছ দেখা গেলেও গত ৪/৫ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, ঘোড়া মাছ কেউ খায় না। এজন্য জেলেরা এ মাছ ধরে না। তবে মাঝেমধ্যে কক্সবাজার উপকূল থেকে ১০/১২ কিলোমিটার নীচে বঙ্গোপসাগরের ১২ বিও (১২ মিটার গভীরতা সম্পন্ন এলাকা) নামক এলাকায় খুঁটা জালে দুয়েকটি ঘোড়া মাছ অন্যান্য মাছের সাথে ধরা পড়তে। কিন্তু ৩/৪ মাস ধরে মাছটি একেবারেই দেখা যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, এক সময় ঘোড়া মাছের শুটকী চোরাইপথে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করা হতো। ওষুধী গুণসম্পন্ন এই মাছের প্রতি কেজি শুটকীর দাম প্রায় এক লাখ টাকা। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বন্য আইনে ঘোড়া মাছ ধরা, পরিবহণ ও বিক্রয় করা আইনত: দণ্ডনীয় অপরাধ।
কাব্যময়–ছন্দময় রাজকীয় জীবন ধারার কারণে সী–হর্স বা ঘোড়া মাছকে ‘সমুদ্রের রাজা’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার উপকূলে ঘোড়া মাছের দেখা মিলছে না। অথচ ৭/৮ বছর আগেও কিছু লোক সাগর থেকে মাছটি ধরে শুটকী বানিয়ে ব্যাগেজ মাল হিসাবে চীনে পাচার করতো বলে শুনেছি।
এই মাছটি এ্যাকুরিয়ামে চাষের মাধ্যমে দেশের সুনীল অর্থনীতিতে নতুন দুয়ার খুলতে পারে বলে মনে করেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা।