৫ দিনে ডাস্টবিন ও রেললাইনের পাশে মিলল তিন নবজাতক

এর মধ্যে দুটি মৃত

ঋত্বিক নয়ন | বুধবার , ১৫ মে, ২০২৪ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

জন্মই যেন তাদের আজন্ম পাপ। যে সময়ে তাদের থাকার কথা ছিল নির্ভরতার স্থান মাতৃক্রোড়ে, সেই সময়ে তাদের ঠাঁই হচ্ছে ডাস্টবিনে, কখনো পথের ধারে কিংবা রেল লাইনে। কখনো আবার তাদের বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, কখনো ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে চলন্ত সিএনজি টেক্সি থেকে। কেন এই নির্মমতা? এর দায় কে নেবে? বাবামা নাকি নিষ্ঠুর এ পৃথিবী? প্রশ্ন অনেক। উত্তর নেই কারো কাছে। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছে নবজাতকের লাশ। গত পাঁচ দিনে তিনটি শিশুকে পাওয়া গেছে ডাস্টবিনে ও রেললাইনের পাশে। এর মধ্যে দুটি শিশু মৃত।

পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তথ্য প্রমাণের ঘাটতি থাকে। তাছাড়া বাদীবিবাদী না থাকায় আগ্রহ কম থাকে। তাই জড়িতদের অনেক সময় চিহ্নিত করাও সম্ভব হয় না। সমাজবিজ্ঞানীরা এ অবস্থাকে সমাজের চরম নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, নারীপুরুষদের অবৈধ মেলামেশার ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে তা সমাজ এবং তাদের পরিবার মেনে নেয় না। ফলে জন্মের পরপরই এসব নবজাতকদের ঠাঁই হচ্ছে ডাস্টবিনে। গত এক দশক ধরে নবজাতক কুড়িয়ে পাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এদের কেউ মরে বেঁচে যায়, কেউ বেঁচে মরে থাকে।

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন মনে করছেন, মূলত সামাজিক অবক্ষয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাবের কারণেই ডাস্টবিনে কিংবা পথের ধারে নবজাতক শিশুদের ফেলে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে কদাচিৎ কাউকে জীবিত অবস্থাতে পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ নবজাতকই মৃত্যুবরণ করে। একইসঙ্গে সামাজিক সমাধান না পেয়ে ডাস্টবিনে, রাস্তার ধারে নবজাতককে ফেলে গিয়ে অনেকে দায় থেকে মুক্তির পথ খোঁজে। তিনি বলেন, আমাদের দেশেও শিশু যত্নকেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু সেসব জায়গাগুলোতে মানসম্মত সেবার অভাব রয়েছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এসব শিশুর পরিচর্যার দায়িত্ব নেওয়া। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে এই বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার। এই ধরনের অবস্থাকে কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেগুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে এ নিয়ে গণসচেতনতাও তৈরি করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে দুই নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আপন নিবাসের গেটের সামনের ডাস্টবিন থেকে নবজাতক দুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেয়ামত উল্লাহ আজাদীকে বলেন, নাসিরাবাদ এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে দুই নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নবজাতকের মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা খুলশী থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ২ নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নির্দেশনা পেলে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। অন্যথায় হতভাগ্য দুই মৃতদেহ দাফন করা হবে।

১০ মে (শুক্রবার) রাত ১১ টার দিকে রেললাইনের পাশে কান্না করছিল একটি শিশু। কান্নার উৎস খুঁজতে খুঁজতে বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী স্টেশনের পরে জামালের ভাতঘর সংলগ্ন রেললাইনের পাশে পাওয়া যায় এই নবজাতক শিশুটিকে। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় এলাকাবাসী। স্থানীয়রা বলেছেন, রাতের আঁধারে শিশুটিকে কেউ রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেছে।

২৬ এপ্রিল শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে ডাস্টবিন থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের খবরে নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নিচের একটি ডাস্টবিন থেকে নবজাতকের লাশটি উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাদগাঁও মডেল থানার ওসি জাহেদুল কবির। তিনি বলেন, কে বা কারা লাশটি ফেলে গেছে তা জানা যায়নি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন বলেন, বয়সের সাথে সাথে শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যেমন পরিবর্তন ঘটছে, তেমনি মন মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটছে। মানুষ অনেক কিছু পেতে চায় সে প্রাপ্তির যদি সংযোগ না ঘটে তাহলে মানুষ অন্য পন্থা অবলম্বন করে। যার কারণে মানুষ পরকীয়া করে, ধর্ষণ করে, জোর করে প্রেম নিবেদন করে, প্রেম আদায় করে। এ অপসংস্কৃতিগুলো তাদের অতিমাত্রায় উৎসাহিত করছে। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধই পারে এ অবক্ষয় থেকে সমাজকে রক্ষা করতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদকের তালা
পরবর্তী নিবন্ধগরমে অতিষ্ঠ মানুষ