চট্টগ্রাম ওয়াসার ৫ হাজার ৩৩২ কোটি টাকার বড় দুটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্প দুটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত প্রকল্প দুটি হলো চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত)। চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালে শুরু হবে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম।
অপরদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্টে–১ এর মেয়াদ চলতি বছরের (২০২৫ সাল) জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে আরো ৩৫ শতাংশ। তাই এই প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রথম সংশোধিত প্রকল্পটি গতকাল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পের সময়সীমা বেড়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে ব্যয় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকায়। সংশোধিত প্রকল্পে ১৪১১ কোটি টাকা বেড়েছে।
চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প : চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৫৭৮ কোটি এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা করবে ৭৪ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে নগরে আরো ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। একইসঙ্গে অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অপচয় রোধ, নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি হাইড্রোলিক জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জোনসমূহের মধ্যে একটি জোন কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়া (কেএসএ), যা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়ায় জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প–২ এর অধীনে নগরীতে মোট ৮শ কিলোমিটার পুরনো পাইপ তুলে নতুন পাইপ বসানো (ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইন) হয়েছিল। তাতে এই এলাকায় প্রায় ৪৬ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সুষম চাপে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ওয়াসার ১০ শতাংশ সিস্টেম লস কমেছে।
অপর পাঁচটি জোনের মধ্যে পতেঙ্গা, খুলশী, এ কে খান, বায়েজিদ, অঙিজেন, কালুরঘাট, চাক্তাই এলাকার ৩০০ কিলোমিটার পুরাতন জরাজীর্ণ পাইপলাইন, লিকেজ, ম্যানুয়াল মিটারিং ব্যবস্থা, অবৈধ সংযোগের কারণে ৪০ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। উক্ত এলাকাসমূহে সুষম চাপে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং পানির অপচয় রোধ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকাসমূহে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ১ লাখ অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার লক্ষ্যে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীতে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং জলবায়ু সহনশীল পানি সরবরাহ বৃদ্ধি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার পরিচালন দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক ক্ষমতা টেকসইকরণ।
স্যুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট–১ এর ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি : একনেক সভায় চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একনেক সভায় সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের ফলে এই প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় দুটিই বেড়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্টে–১ এর মেয়াদ ছিল চলতি বছরের (২০২৫ সাল) জুন পর্যন্ত।
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এই প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ অবশিষ্ট রয়েছে ৩৫ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন থেকে ২০২৬ এর জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি থেকে বেড়ে ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পে ১৪১১ কোটি টাকা বেড়েছে।
স্যুয়ারেজের সংশোধিত প্রকল্পের ডিজাইন টেকসইকরণের মাধ্যমে হালিশহরের ১৬৩ একর জায়গায় আরো দুটি স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট–৫ (উত্তর কাট্টলী) ও ৬-(পতেঙ্গা) ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট একই জায়গায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। তাতে ওয়াসার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজতর হওয়া ছাড়াও এই দুই প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে সাশ্রয় হবে মোটা অংকের টাকা। পাশাপাশি উত্তর কাট্টলী ও পতেঙ্গা এলাকার মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে ওয়াসার স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে।
এর আগে ২৩ মার্চ একনেকে ২ হাজার ১৫৫ কোটি টাকার চট্টগ্রাম ওয়াসার কালুরঘাট এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।