২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য সিলেবাস প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। সিলেবাসের বিস্তারিত এরই মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। করোনাইরাস মহামারিজনিত পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য এই সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা। খবর বিবিসি বাংলার। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অধ্যাপক সাহা বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নবম শ্রেণিতে পাঠদান করা সম্ভব হয়েছে কিন্তু দশম শ্রেণিতে পাঠদান সম্ভব হয়নি। এইচএসসির ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। সে বিবেচনা থেকেই সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪টি কর্মদিবস নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০ কর্ম দিবসে যতটুকু পড়ানো সম্ভব হবে ঠিক ততটুকু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সিলেবাসে। এইচএসসির ক্ষেত্রেও সেরকম ৮৪টি কর্মদিবস বিবেচনায় রেখে যতটুকু পাঠদান সম্ভব হবে সেটুকুর উপরেই পরীক্ষা নেয়া হবে- বলেন অধ্যাপক সাহা। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে নাগাদ খুলবে এবং কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সে সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। কয়েকদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের ধারণা দিয়েছিলেন যে জুন মাসে এসএসসি এবং জুলাই-অগাস্ট মাসে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেজন্য মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এসএসসি এবং জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এইচএসসির ক্লাস শেষ করা হবে।
পাঠ্যক্রম কিভাবে নির্ধারিত হয়েছে : ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমে দেখা যাচ্ছে, কোন অধ্যায়গুলো পড়তে হবে এবং সে অধ্যায়ের জন্য কয়টি ক্লাস নিতে হবে সে বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যেমন এসএসসি মাধ্যমিকের একটি বিষয় হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’। এখানে সাতটি অধ্যায় পড়ানোর জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্লাস হবে ৩০টি। এখানে অন্তর্ভুক্ত সাতটি অধ্যায়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দ্বিতীয় অধ্যায়। এর বিষয়বস্তু হচ্ছে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’। এই অধ্যায়ে পরিচ্ছেদ ২.১ সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে রয়েছে – মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এই পরিচ্ছেদের জন্য দুটো ক্লাস নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে সবগুলো বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের জন্য ক্লাস নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বাংলা এবং ইংরেজির ক্ষেত্রে কোনো গল্প এবং কবিতা পড়তে হবে সেটিও নির্ধারণ করা আছে। কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব বিষয় একজন শিক্ষার্থীর অবশ্যই জানা প্রয়োজন সেসব বিষয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে রাখা হয়েছে। একটা বিষয়ে একজন শিক্ষার্থীকে কতটুকু অবশ্যই পড়তে হবে তার উপর ভিত্তি করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে, জানান অধ্যাপক সাহা।
রংপুরে অবস্থিত বীর উত্তম শহীদ সামাদ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আশরাফ আলী বলেন, সিলেবাস পর্যালোচনা করে তার মনে হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, গত এক বছর যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের কারণে শিক্ষার্থীরা আরো কম জানতে পারবে। সিলেবাস কমিয়ে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান শিক্ষক আশরাফ আলী। এটা ভালো উদ্যোগ। অটো পাশ দেবার চেয়ে এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ, বলেন আশরাফ আলী। সিলেবাস কমিয়ে দেবার কারণে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী এবিএম সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সিলেবাস কমিয়ে দেবার বিষয়টিতে ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই রয়েছে। তিনি বলেন, সিলেবাস কম থাকার কারণে পরীক্ষা দিতে তাদের সুবিধা হবে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার সুযোগও বাড়বে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হবে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি পরীক্ষার জন্য এইচএসসি পুরো সিলেবাস পড়া দরকার হয়। পুরো সিলেবাস পড়া থাকলে ভর্তি পরীক্ষায় সুবিধা হয়। কিন্তু এখন যদি অর্ধেক সিলেবাস পড়ি তাহলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনেক গ্যাপ থাকবে, বলেন শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন।