৫শ একর ভূমির প্রতীকী মূল্য পরিশোধ হবে আজ

বে টার্মিনাল । জেলা প্রশাসন জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পর শুরু হবে নির্মাণকাজ

হাসান আকবর | রবিবার , ১২ মে, ২০২৪ at ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে গতিশীল হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্প। জায়গার সংকটে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা প্রকল্পটির জন্য সরকার প্রতীকী মূল্যে ৫শ একর জমি প্রদান করছে। আজ বন্দর কর্তৃপক্ষ ভূমির মূল্য বাবদ ৩ কোটি ৩ টাকার চেক বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জায়গা বুঝে পাওয়ার পর বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলবে বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হালিশহরের উপকূলীয় এলাকার ৮৫৭ একর ভূমিসহ সাগর ভরাট করে গড়ে তোলা প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে বে টার্মিনাল গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের তালিকাভুক্ত। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের বেশ কিছু কাজ হলেও জায়গার সংস্থান না হওয়ায় সবকিছু ঝুলে পড়েছিল। ভূমির সংস্থান করা প্রকল্পটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছয় কিলোমিটারের বেশি লম্বা ভূমির উপর বে টার্মিনাল গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার শুরুতে ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি সরকার হুকুমদখল করে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে। ইতোমধ্যে এই ভূমি উন্নয়নের নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাকি ৭৮৯ একর ভূমি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হচ্ছিল না। বন্দর কর্তৃপক্ষ এই ভূমি বে টার্মিনালের জন্য বরাদ্দের আবেদন করার পর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রদানের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব প্রদান করে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উক্ত ভূমির ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, উক্ত ভূমির মধ্যে ২২ একর ভূমি নিয়ে মামলা রয়েছে। এগুলোর মালিকানা বিভিন্নজন দাবি করছেন। এছাড়া ২৬৭ একর ভূমি বনবিভাগের বনায়নের জন্য গেজেট করা রয়েছে। এর বাইরে সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত ৫০০ একর ভূমি রয়েছে; যেগুলো নিয়ে বিরোধ নেই। ৫০০ একর ভূমি ইজারার জন্য ১২৪১ কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

বনবিভাগের নামে গেজেটভুক্ত ২৬৭ একর ভূমিতে নতুন করে ডিগেজেট করে নেওয়ার ব্যবস্থা জটিল। কিন্তু সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত ৫শ একর জায়গা যেকোনো সময় সরকার ইচ্ছে করলে ইজারা প্রদান করতে পারে। কিন্তু এই ৫শ একর নিষ্কণ্ঠক ভূমির মূল্য ১২৪১ কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করায় বন্দর কর্তৃপক্ষ চিন্তায় পড়ে। এত টাকা দিয়ে জমি কিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন। বন্দর কর্তৃপক্ষ ভূমির মূল্য বাবদ টাকা প্রদান করতে পারবে না জানিয়ে বলা হয়, বে টার্মিনাল সরকারি প্রতিষ্ঠান। জায়গা কিনে টার্মিনাল করার মতো অবস্থা বন্দরের নেই। এই জমি বন্দর কর্তৃপক্ষ কখনো বিক্রি করতে পারবে না। জমির মূল্য বাবদ অপারেটরের কাছ থেকে টাকাও নেওয়া যাবে না। ‘সাঙ্ককেন কস্ট’ হিসেবে এই ভূমি ব্যবহৃত হবে। তাই ভূমির মূল্য না নিয়ে প্রতীকী মূল্যে ভূমি বরাদ্দের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আবেদন করে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। প্রধানমন্ত্রী উক্ত ভূমির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ অনুমোদন প্রদান করেন।

নানা প্রক্রিয়ার পর অবশেষে সরকার ৫শ একর খাস জায়গার জন্য ৩ কোটি ৩ টাকা প্রতীকী মূল্য নির্ধারণ করে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নির্দেশনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ৩ কোটি ৩ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার এই টাকা জমা দেওয়ার কথা ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু চেক তৈরি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার টাকা জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আজ রোববার সকালে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫শ একর সরকারি খাস জায়গার প্রতীকী মূল্য হিসেবে ১ কোটি ১ টাকা করে তিনটি চেক বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেবে।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ৩টি পৃথক মৌজা হওয়ায় তিনটি চেক প্রদান করতে হচ্ছে। তিন মৌজায় মোট ৫শ দশমিক ৭০ একর জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কাট্টলী মৌজার ৬২ দশমিক ২২ একর, উত্তর হালিশহর মৌজার ৩৩৯ দশমিক ২৬ একর এবং হালিশহর মৌজায় ৯৯ দশমিক ২১ একর খাস জমি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক আজাদীকে জানান, সরকারের কাছ থেকে বে টার্মিনালের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তি হিসেবে ৫শ একরের বেশি জায়গা পাওয়া গেছে। আজ এই টাকা পরিশোধ করা হলে জেলা প্রশাসন আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দেবে। এর পরপরই পুরোদমে শুরু হবে বে টার্মিনালের নির্মাণকাজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপূর্ণাঙ্গ সড়ক আইন পাস হচ্ছে শিগগিরই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমা, তোমার ওপরই বেশি নির্ভর করা যায়