৪৫ কোটি টাকায় চার লেন হচ্ছে শেখ হাসিনা সড়ক

২৮ অক্টোবর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের তালিকায় বিমানবন্দর গোলচত্বরে নির্মিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালও

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়কের চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ। ৪৫ কোটি টাকায় সড়কটির সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বিমানবন্দর হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ কিলোমিটার অংশ চার লেনে উন্নীত করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর মধ্যে টানেল থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্রায় ২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার অংশে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। একইদিন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবেশমুখে গোলচত্বরে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৮৪ লাখ টাকায় দেশের প্রথম এ ভার্টিক্যাল ম্যুরালটি (দ্বিমাত্রিক ভাস্কর্য) নির্মাণ করে চসিক। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়কটি চার লেনে উন্নীত করাসহ নান্দনিকভাবে সাজাব। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজ শেষ হয়েছে, আরো অনেক কাজ বাকি আছে। এটা চট্টগ্রামের অন্যতম সুন্দর সড়কগুলোর একটি হবে।

তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছেন। যেদিন তিনি এ দায়িত্ব নেন এরপর থেকে আর চট্টগ্রামকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামকঙবাজার রেললাইন, মীরসরাই ইকোনমিক জোন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনকে আড়াই হাজার কোটি টাকা এবং এক হাজার ৩৬২ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প দিয়েছেন। কোভিড ফান্ড থেকেও সহায়তা করেন। সে জন্য আমরা সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কটি জননেত্রী শেখ হাসিনার নামে করার। সেটা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও পেয়েছে।

বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সৌন্দর্যহীন থাকায় বিমানবন্দর থেকে বের হতেই চট্টগ্রাম সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা হত বিদেশিদের। সেখানে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল স্থাপন করে পুরো দৃশ্যই পাল্টে দেয়া হয়। এখন যে কেউ আসলেই মুগ্ধ হবেন। মেয়র বলেন, ম্যুারাল নির্মাণের পরিকল্পনাটি আমার ছিল, শিল্পীরা সেটা সুন্দর করে এঁেকছেন বা বাস্তবে রূপ দেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভার্টিক্যাল ম্যুারাল কিন্তু বাংলাদেশের আর কোথাও হয়নি। পৃথিবীতে একটি আছে এবং সেটা হচ্ছে নেলসন ম্যান্ডেলার। ওই দিক থেকে আমাদের স্থাপিত ভার্টিক্যাল ম্যুরালটি পৃথিবীতে দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশে প্রথম। এটা চট্টগ্রামবাসীর জন্য গৌরবের। চট্টগ্রামের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কর্পোরেশন যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তার প্রমাণ এটি।

চার লেন উন্নীতকরণ : জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে চসিকের ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক দুই হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকার প্রকল্পের আওতায়। জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে তিনটি লটে। সড়কটির সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ৯ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা, ৯ নম্বর ব্রিজ থেকে বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত ১০ কোটি এবং বিমানবন্দর মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত ২৫ কোটি টাকায় লটগুলো সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে দুটি লটের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। পুরো ৯ কিলোমিটার সড়কটির গড় প্রস্ত ছিল ১৬ থেকে ২৬ ফুট। চার লেনে উন্নীত হলে তা কমপক্ষে ৬০ ফুটে উন্নীত হবে। এর মধ্যে টানেল থেকে বিমাবন্দর পর্যন্ত ৬৪ ফুট, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ৯ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে সর্বোচ্চ ৯৬ ফুট প্রশস্ত করা হবে।

জানা গেছে, লট১ এর আওতায় বিমানবন্দর মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত দুই দশিক ৭৫ কিলোমিটার অংশে এক লেয়ার এর কার্পেটিং এর কাজ শেষ হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের নির্বাহী মো. আশিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, টানেল মোড় থেকে এয়ারপোর্ট, বোট ক্লাব, রুবি সিমেন্ট গেট হয়ে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত পুরো সড়কটি ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। যার পুরোটাই চার লেনে উন্নীত হবে। সড়কের দুই পাশে ফুটপাত, ড্রেন ও মাঝখানে মিড আইল্যান্ড হবে। সাথে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের মুখ থেকে এয়ারর্পোটের মোড় পর্যন্ত আপাতত আমরা কাজ শেষ করেছি। সেখানে এক লেয়ার কার্পেটিং, ল্যান্ড মার্কিং এবং বাগান করেছি। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। মাঝখানে মিডআইল্যান্ডে বসার ব্লক হবে। রাস্তার পাশে মানুষের বসার সুন্দর ব্যবস্থা করা হবে। আরো সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক বা তৎকালীন বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছরের ২১ আগস্ট নগর ভবনে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ২১টি সেবা সংস্থার সঙ্গে চসিকের উদ্যোগে সভা হয়েছিল। এতে সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণে একমত হন। কিছুদিন পর জাইকার অর্থায়নে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় সড়কটির সিমেন্ট ক্রসিং থেকে নেভী ফ্লোটিলা মোড় পর্যন্ত এবং বোট ক্লাব থেকে বাটার ফ্লাই পার্ক পর্যন্ত চার লেইনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে চসিক। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে গৃহীত চসিকের বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে নেভী ফ্লোটিলা মোড় থেকে ড্রাই ডক ওমেরা পর্যন্ত অংশও অর্ন্তভুক্ত করা হয়। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১২তম সাধারণ সভায় বিমানবন্দর সড়কের বারিক বিল্ডিং থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সড়কের নাম ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে তা অনুমোদন চেয়ে একই বছরের ১৬ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগে পত্র দেয় চসিক। পরবর্তীতে ১৬ মে মন্ত্রণালয় থেকে চসিকে চিঠি দিয়ে নতুন নামকরণে সম্মতি দেয়নি বলে জানিয়ে দেয়া হয়। একইসঙ্গে সড়কটির বিষয়ে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এর ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদনের কপি প্রেরণের নির্দেশনা দেয়া হয় চসিককে। পরবর্তীরত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এর অধীন ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে ২০২২ সালের বছরের ২০ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে আবারো চিঠি দেয় চসিক। এরপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ বিমানবন্দর সড়ক (সল্টগোলা থেকে এয়ারপোর্টের প্রবেশ মুখ পর্যন্ত) ও ভিআইপি রোডের (এয়ারপোর্টের প্রবেশ মুখ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মুখ পর্যন্ত) অংশকে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক’ নমকরণের অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডাচদের রেকর্ড ব্যবধানে হারালো অস্ট্রেলিয়া
পরবর্তী নিবন্ধগ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে না আনসার বাহিনী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী