৩ হাজার ২৮০ কিমি সাগর পাড়ি দিয়ে কচ্ছপ গেল শ্রীলঙ্কায়

কক্সবাজার উপকূলে ট্রান্সমিটার বসিয়ে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ২৪ মে, ২০২৫ at ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে বিপণ্ন প্রজাতির প্রাণী সামুদ্রিক কাছিমের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গতকাল (২৩ মে) বিশ্ব কাছিম দিবসে সাম্প্রতিক সময়ে কাছিমের অধিক হারে মৃত্যু ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। তবে আশার খবরও জানিয়েছেন কেউ কেউ।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আইইউসিএন এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার বন্য প্রাণী গবেষক সীমান্ত দিপু জানিয়েছেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি আমরা ৪টি সামুদ্রিক কাছিমের গায়ে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ট্রান্সমিটার স্থাপন করে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের একটি গবেষণা কার্যক্রম শুরু করি। এ পর্যন্ত আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি তা অভাবনীয় ও রোমাঞ্চকর। গত ১০২ দিনে একটি কচ্ছপ কক্সবাজার উপকূল থেকে দীর্ঘ ৩ হাজার ২৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেছে শ্রীলঙ্কার উত্তর প্রদেশের উত্তরপূর্ব উপকূলের মুল্লাইথিভু জেলায়। এই যাত্রা শুধু তার শক্তি ও অভিযোজন ক্ষমতার সাক্ষ্যই নয়, বরং সামুদ্রিক পরিবেশের আন্তঃসংযুক্ততাকেও তুলে ধরে। এই গবেষণাটি সামুদ্রিক কাছিম ও তাদের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

গবেষকদের মতে, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ ও বিপণ্ন কাছিম রক্ষায় এখনই গুরুত্ব সহকারে তাদের বাস্তুতন্ত্র তথা আবাসস্থল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় ডাইনোসরের মত একদিন কাছিমও হারিয়ে যাবে আমাদের প্রকৃতি থেকে। প্রজনন মৌসুমে সামুদ্রিক কাছিম দল বেঁধে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসে। এখানে ডিম পাড়তে এসে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের শিকার হয়ে মারা পড়ে এসব কাছিম। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে বিভিন্ন পয়েন্টে সামুদ্রিক ডিমওয়ালা কাছিম মারা যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা।

গবেষকদের মতে, কয়েক দশক ধরে কক্সবাজার উপকূলে সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্র অরক্ষিত হওয়ায় প্রতিবছর সৈকতে ডিম পাড়তে এসে মারা পড়ছে স্ত্রী কাছিম। কক্সবাজারে পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নে সৈকতে আলোকায়ন, সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়া, ডিম ছাড়ার মৌসুমে বিচে ড্রাইভিং, খেলাধুলা, সৈকতে হাঁটা কাছিমের ডিম দেওয়ার পরিবেশ সংকটাপণ্ন হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরির) দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সোনাদিয়া, পেঁচার দ্বীপ, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী ও টেকনাফ, সেন্টমার্টিন সৈকতে অন্তত অর্ধশতাধিকের কাছাকাছি বড় আকৃতির মৃত কাছিমের সন্ধান মিলেছে। সামুদ্রিক মা কাছিম ডিম দেওয়ার সময় নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে এপ্রিলমে পর্যন্ত। সমুদ্র উপকূলের ৩৪ পয়েন্টের মহেশখালীর সোনাদিয়া থেকে শুরু করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত তারা রাতের বেলায় নির্জন স্থানে এসে একটি গর্ত তৈরি করে ডিম দেয়। একটি মা কচ্ছপ ৬০১০০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। ডিম দেওয়া শেষ করে মাটিচাপা দিয়ে মা কাছিম ফিরে যায় সাগরে। এ সময় প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ৬০৭০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে গর্ত থেকে বের হয়ে সাগরে চলে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড়ে টক ফল চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা.
পরবর্তী নিবন্ধলজ্জাবতী বানর : আবাসবিহীন ‘পরিবেশের বন্ধু’