৩ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আদায় করা হবে : নাহিদ

| শনিবার , ২৬ জুলাই, ২০২৫ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায় করা হবে। তিনি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটে এনসিপির পদযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্যে এই কথা বলেন। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নগরের চৌহাট্টা থেকে পদযাত্রা শুরু করে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ হয়। দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিলেটে অনুষ্ঠিত জুলাই পদযাত্রায় দলটির সিলেটের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। পদযাত্রায় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’ এমন নানা শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সিলেটের রাজপথ। খবর বাসসের।

সমাবেশে নাহিদ আরও বলেন, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। যেই নতুন সংবিধানে আপনারআমার অধিকারের কথা থাকবে, মানুষের মর্যাদার কথা থাকবে। আগামী ৩ আগস্ট আমরা শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায়ের লক্ষ্যে। ইনশাআল্লাহ, শহীদ মিনার থেকে আমাদের দাবি আদায় করে নেব। প্রবাসীদের ভোটাধিকারের লক্ষ্যে এনসিপি কাজ করছে জানিয়ে সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমার প্রবাসী সিলেটী ভাইয়ের রক্তঘামে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে। আমরা সেই সকল প্রবাসী ভাইদের ভোটাধিকারের জন্য কথা বলছি। আমরা চাই, সিলেটসহ সারাদেশের প্রবাসী ভাইয়েরা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণের অংশ হবেন।

সিলেটকে বহু জাতিধর্ম ও বহু সংস্কৃতির প্রতীক উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সিলেটের আলেম সমাজ, সিলেটের নারীগণ, সিলেটের সংখ্যালঘু সমপ্রদায়, সিলেটে নানাবিধ জাতি সমপ্রদায়ের মানুষের বসবাস। আমরা বাংলাদেশকে বহুজাতি ও সংস্কৃতির দেশ হিসেবে গড়তে চাই সিলেট তার অন্যতম প্রতীক। এখানে শত শত ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদেরকে সে সকল সংস্কৃতি ও সিলেটী ভাষার মর্যাদা দিতে হবে। বৈষম্যহীন বালাদেশ গড়তে এনসিপি কাজ করবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, তেল, গ্যাস, পাথরসহ নানা খনিজ সম্পদে ভরপুর এই সিলেট। এই সিলেটকে আগামীর শিল্পন্নোত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিলেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি আগামীতে কাজ করবে। দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য গণঅভ্যুত্থানে শত শত ভাইবোন শহীদ হয়েছেন। আপনার আমার দায়িত্ব হচ্ছে, সেই বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য কাজ করা।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আগামীর নতুন বাংলাদেশে সিলেট হবে এনসিপির অন্যতম দুর্গ। সিলেটবাসী আজ তা দেখিয়ে দিয়েছেন। এরপর তিনি বলতে শুরু করেন, যুগ যুগ ধরে সিলেট বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেট বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে সিলেট ছিল অগ্রগামী। আন্দোলনে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট ছিল অন্যতম কেন্দ্রভূমি। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেটবাসীর মূল্যবান অবদানের কথা স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এটিএম তুরাবসহ এই সিলেট জেলার ১৭ জন মানুষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন। আমরা সেইসব শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে এসেছি এই সিলেটে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, এনসিপি বিএনপি বিরোধী বলে যে প্রচার করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট চলতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, সিলেটের চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের ঠিকমতো মজুরি দেওয়া হয় না। চা বাগানের লাভ শুধু মালিক নয়, শ্রমিকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করবে এনসিপি। বক্তব্যে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করেই এনসিপি উঠে এসেছে। আমরা আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এসেছি। এনসিপি কোনো চাঁদাবাজ কিংবা টেন্ডারবাজ দলের নাম নয়। সংকট থেকে, সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়েই এনসিপি উঠে এসেছে।

সিলেটে এনসিপিকে শক্তিশালী করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অর্পিতা আপা, এহতেশাম ভাই, জুনায়েদ ভাইয়ের নেতৃত্বে আপনারা এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করুন। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি পরবর্তী বাংলাদেশ হবে জনগণের বাংলাদেশ। হাসনাত আরও বলেন, আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী লেখক ও নেতারা এখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, তাদের প্রতিহত করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সভায় যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট পৌঁছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ রুদ্রের ক্যাম্পাস শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটকে ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ এ শ্রদ্ধা জানান গত জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী প্রধান সমন্বয়ক ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এদিকে সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকেই উৎসুক দলটির সমর্থকরা। সমাবেশ ঘিরে পুরো এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে পুলিশ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে চৌহাট্টার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সিলেটের বিভিন্ন ইউনিটের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে চারপাশ। নগরজুড়ে নির্মাণ করা হয় তোরণ। রাত থেকেই সিলেট মহানগর পুলিশের নজরদারিতে ছিল পুরো এলাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ লায়ন্স জেলা গভর্নর মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু চট্টগ্রাম আসছেন
পরবর্তী নিবন্ধপুকুর সংকটে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না বিএফডিসি