তিন হাজার ৮৬৪ কোটি ৯৫ লাখ ২৪ টাকায় প্রস্তাবিত দুই প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অনুমোদন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনসহ অন্যান্য দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সহজতর করতে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন তিনি। দুই প্রকল্পের একটি বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্প। এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় প্রকল্পটি সংশোধিত হয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অপরটি হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প। দুই হাজার ৪৯৯ কোটি ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকার প্রকল্পটি আগামী ১৬ জুন অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা তথা প্রি-একনেকে উপস্থাপন হওয়ার কথা রয়েছে।
চসিক সূত্র জানা গেছে, সিটি মেয়র গতকাল বুধবার সচিবালয়ে যান। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সঙ্গে। এ সময় মেয়র সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত প্রকল্প দুটির বিষয় উপস্থাপন করেন। দুই মন্ত্রী প্রত্যাশিত সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন মেয়রকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে জানান, যে কোনো প্রকল্পের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও তদবির করতে হয়। সাধারণত চসিকের কর্মকর্তারা এ যোগাযোগ রক্ষা করেন। সেক্ষেত্রে অনেক সময় কাক্সিখত রেজাল্ট পাওয়া যায় না। তাই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে মেয়র যদি সরাসরি মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে কথা বলেন তাহলে অনেক জটিলতা দূর হয়ে যায়। সিটি মেয়রের উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং কর্পোরেশনের জন্যই তা ভাল হবে।
জানতে চাইলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম প্রকল্প হিসেবে এয়ারপোর্ট রোড সম্প্রসারণ প্রকল্পটি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। অনেকগুলো কাজ হবে প্রকল্পটির আওতায়। শহরের বেশিরভাগ সড়ক অর্ন্তভুক্ত এ প্রকল্পে। ফুটওভার ব্রিজ হবে। আগামী প্রি-একনেক সভায় প্রকল্পটি ওঠবে। পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রকল্পটির বিষয়ে কথা বলেছি। সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। মন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন।
বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, অনেক আগের প্রকল্প এটি। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পটি এতদিন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সেটার কাজ করতে চাচ্ছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা খুব দরকার। এখন প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে। সেজন্য সেটা একনেকে অনুমোদন হবে। এটা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটির ৭৫ শতাংশ সরকার এবং ২৫ শতাংশ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় করার কথা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক অক্ষমতা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ অর্থ সরকারি ফান্ড থেকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়েও মন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন মেয়র মহোদয়।
প্রসঙ্গত, পুনর্গঠিত ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ডিপিতে প্রকল্পের এক হাজার ৯৯৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা সরকারি অর্থায়নে এবং বাকি ৪৯৯ কোটি ৮১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা চসিকের নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়।
এদিকে ২০১৪ সালের ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ চার হাজার টাকায় নতুন খাল খনন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছিল। পরবর্তীতে কাক্সিখত বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি চসিক। বর্তমানে আটকে আছে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায়। মাঝখানে কয়েক দফা সংশোধিত হয়েছে প্রকল্পটি। সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়।











