দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে নতুন করে আরও ৩৪ ধরনের জিনগত পরিবর্তন শনাক্ত করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি প্রতিষ্ঠানের একটি গবেষক দল। গবেষক দলটির এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রবন্ধ সমপ্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ারে প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের ২০২০ সালের জিনোম সিকোয়েন্সগুলো নিয়ে বিশ্লেষণী এ গবেষণাপত্রের সারমর্ম অনুযায়ী, গত এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসের জিনোমে ৪ হাজার ৬০৪ ধরনের ভিন্নতা দেখা গেছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায়নি এমন নতুন ধারার পরিবর্তন বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ৩৪টি। এ পরিবর্তনকে (মিউটেশন) গবেষকেরা নাম দিয়েছেন ‘বাংলা মিউটেশন’। বাংলাদেশের তিন জেলা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে নতুন শনাক্ত হওয়া এসব জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশনে পাওয়া গেছে।
গবেষণায় বলা হয়, পৃথিবীব্যাপী করোনাভাইরাসের যে পরিবর্তনটিকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংক্রমণশীল বলে বিবেচনা করা হয়েছে, সেই ‘জি৬১৪ডি’ মিউটেশনটি বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ সিকুয়েন্সের মধ্যে ছিল।
গবেষকরা জানান, এখানে একই সাথে চারটি মহাদেশের ভাইরাসের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্যান্য অঞ্চলের সাথে ইউরোপের করোনার সাথে সাদৃশ্য অনেক বেশি। চট্টগ্রামের করোনার সাথে বিশেষ করে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের করোনার মিল রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য মহাদেশের সাথেও উল্লেখযোগ্য মিল দেখা গেছে।
এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহবুব হাসান, ড. আদনান মান্নান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) শিক্ষক রাসেল দাশ।
গবেষণা তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এসএম মাহবুবুর রশিদ ও ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী। এছাড়া গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন মালেশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হামিদ হোসাইন ও নাজমুল হাসান। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমা সালাউদ্দিন, রাশেদুজ্জামান ও মেহেদী হাসান।
গবেষকদলের ড. আদনান মান্নান বলেন, এ মিউটেশন বা জিনগত ভিন্নতার কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিশেষ উপসর্গের পেছনে এ রকম ইউনিক বা বাংলাদেশে স্বতন্ত্র মিউটেশনগুলো দায়ী কিনা কিংবা এ ধরনের মিউটেশন থাকলে রোগীরা উপসর্গবিহীন হয় কিনা সেটাও দেখা প্রয়োজন। কারণ ‘নিউ মাইক্রোবস অ্যান্ড নিউ ইনফেকশন’ নিবন্ধে প্রকাশিত আমাদের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সামপ্রতিক সময়গুলোতে দেশে আনুপাতিক হারে উপসর্গবিহীন কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ইউএসটিসির শিক্ষক রাসেল দাশ বলেন, এ গবেষণায় পাওয়া ফলাফলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো বাংলাদেশের ইউনিক মিউটেশনগুলো অঞ্চলভিত্তিক। কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন শুধু নির্দিষ্ট কিছু জেলা বা অঞ্চলেই দেখা গেছে। এক্ষেত্রে সেইসব জেলার ভৌগোলিক অবস্থান, জীবনযাপন এবং পরিবেশগত নিয়ামকগুলো হয়ত ভাইরাসকে বদলে দিতে ভূমিকা পালন করছে।
গবেষণা তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী জানান, করোনাভাইরাসের নতুন ধারার যে ৩৪ ধরনের মিউটেশন বা পরিবর্তন বাংলাদেশে পাওয়া গেছে তা কতটা ক্ষতিকর, সেটি নির্ণয় করাটা জরুরি। সেটিও আরেকটি গবেষণার বিষয়।