অসচেতন পারাপার, কানে ইয়ারফোন, মোবাইল আসক্তি–এসব কারণেই ঢাকা–চট্টগ্রাম রেল রুটের মীরসরাইয়ের ৩৩ কিলোমিটার রেলপথ এখন যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ঝরছে নিরীহ প্রাণ, তবু কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সচেতনতা উদ্যোগের অভাবে থামছে না মৃত্যুর মিছিল। গত চার বছরে বিভিন্ন ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।
গণমাধ্যম ও পুলিশের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মীরসরাইয়ের বুক চিরে গেছে দেশের অন্যতম ব্যস্ত রেলপথটি। উপজেলার ধুমঘাট থেকে বড়দারোগারহাট পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটারজুড়ে প্রতিদিন ছুটে চলে ঢাকা–চট্টগ্রাম–সিলেটসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেন। এই পথে দুর্ঘটনা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। ২০২২ সালের ২৯ জুলাই বড়তাকিয়া লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেন–মাইক্রোবাস সংঘর্ষে প্রাণ হারান ১৩ জন পর্যটক। ২০২৩ সালে বড়তাকিয়া রেল স্টেশনের পাশে একজন অজ্ঞাত যুবক ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। ২০২৪ সালে খৈইয়াছড়া এলাকায় সাদেক হোসেন নামে এক ব্যক্তি ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারান। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রেললাইনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ১১ জনের, যার মধ্যে রয়েছে একসঙ্গে তিন বন্ধুর করুণ মৃত্যু। দুর্ঘটনার বেশিরভাগ ঘটেছে সোনাপাহাড়, বারইয়ারহাট, মীরসরাই, বড়তাকিয়া ও ওয়াহেদপুর এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেললাইনের পাশে গড়ে উঠছে নতুন নতুন কারখানা ও বসতি। এতে পথচারিদের চলাচল বেড়েছে, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
স্থানীয় বাসিন্দা রূপায়ন কর বলেন, অনেকেই রেললাইনে বসে মোবাইল দেখে আড্ডা দেয়। ট্রেন আসার বিষয়টি অজানা থাকার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। আরেক বাসিন্দা মহিউদ্দিন বলেন, ট্রেন আসার আগে সিগন্যাল বা হর্ন বাজানো হলেও অনেক সময় তা যথেষ্ট সতর্কতা হিসেবে কাজ করে না। তাই রেললাইনে আড্ডা ও মোবাইল ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
চিনকি আস্তানা রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানান, এই এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানা থাকায় লোকজনের চলাচল বেশি। অসচেতনতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ। সতর্কবার্তা ও সাইনবোর্ড থাকা সত্ত্বেও মানুষ মানছেন না নিয়ম।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, রেললাইন পারাপারে অসচেতনতা, মোবাইল ব্যবহার ও ট্রেন আগমনের রুট অজানা থাকার কারণে প্রতিবছরই মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। আমরা লিফলেট বিতরণ ও সভাসহ বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম করছি।












