চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের একমাত্র এমআরই মেশিনটি গত দুই বছরেরও বেশি সময় নষ্ট পড়ে আছে। মেশিনটি মেরামতে চমেক হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ এই সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি), ন্যাশনাল ইলেকট্রো–মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিইউ অ্যান্ড টিসি) এবং মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডকে ৩০ বার চিঠি লিখে।
গত দু্ই বছর ধরে কেবল চিঠির সংখ্যা বাড়লেও মেশিনটি সচল করা যায়নি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এমআরআই মেশিনটি ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হয়ে যায় গত ২০২১ সালের জুনে। এরপর থেকে মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি (সিএমসি) নিয়ে সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের সাথে টাকার অংক নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়। তবে সম্প্রতি নিমিইউ অ্যান্ড টিসি’তে একটি বৈঠকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এমআরআই মেশিনটির মেরামত এবং ৩ বছরের সিএমসির জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রস্তাব দাখিল করে। বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
জানা গেছে, গত ২০১৭ সালে চমেক হাসপাতালে নষ্ট পড়ে থাকা এমআরআই মেশিনটি বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের (১.৫ টেসলা) মেশিনটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড মেশিনটি সরবরাহ করে। হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের নিচতলায় ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর মেশিনের স্থাপন শেষে উদ্বোধন করা হয়। মেশিনটির সেবা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে। তবে মেশিনটি ৩ বছরের ওয়ারেন্টির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ২০২০ সালের অক্টোবরে অচল হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে এমআরআই সেবা বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের মে মাসে মেরামত করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। তবে মাস না যেতেই ফের অকেজো হয়ে পড়ে এই এমআরআই মেশিন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধই রয়েছে মেশিনটি।
এদিকে হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিনটি দীর্ঘ সময় ধরে নষ্ট পড়ে থাকার দরিদ্র রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক রোগী উপায় না দেখে ধার–দেনা করে বেসরকারি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এমআরআই পরীক্ষা করছেন। চমেক হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা–নিরীক্ষায় ক্ষেত্র বিশেষে তিন হাজার ও চার হাজার টাকা ফি দিতে হলে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খরচ পড়ছে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
চিকিৎসকরা বলছেন, মস্তিস্কের বিভিন্ন স্নায়ু, টিউমার, স্ট্রোকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআইয়ের প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতালে এমআরআই মেশিন সচল থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগ নির্ণয় করে রোগীদের দ্রুত সেবা দেয়া সম্ভব হতো। তবে এখন আমাদের রোগীরা সেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় ৪ কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। দীর্ঘ সময় হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিনটি নষ্ট থাকার কারণে গরীব রোগীরা কম খরচের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নষ্ট হওয়ার পর থেকে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে আসছি। এখন মেশিনটি অন্তত মেরামত করা হলেও রোগীরা পুনরায় সেবা পাবেন।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, এমআরআই মেশিন সচল করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ৩০ বার চিঠি লিখা হয়েছে। আমাদের অবস্থান থেকে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ মেশিনটি চালু হলে হলে গরীব রোগীরা কম খরচে সেবা পাবেন।