একটি স্লুইচগেটের জন্য ৩০ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন আনোয়ারার ৫ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। ইছামতি খালের উপর এই বাঁধটি নির্মাণে দীর্ঘ বিলম্বের কারণে উপজেলার ৫ ইউনিয়নে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অর্ধশত শাখা খাল। চাষাবাদ বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ। প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো উপজেলা সদরের কাছে ইছামতি খালের উপর এই বাঁধ নির্মাণে নেয়া হয়নি কার্যকর উদ্যোগ। অবশেষে ধরা দিয়েছে স্বপ্ন। ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের লাখো মানুষ ভাগ্য বদলের আশায় আছেন।
আনোয়ারা উপজেলার ইছামতি খালের উপর স্লুইচগেট না হওয়ায় উপজেলার ৫ ইউনিয়নের বিশাল এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ে। জোয়ার-ভাটার পানি ঢুকে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়া ছাড়াও অনেক ফসলি জমিতে খালের সৃষ্টি হয়ে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। এতে পরৈকোডা ইউনিয়নের কৈখাইন, আনোয়ারা সদরের ডুমুরিয়া, রুদুরা, আনোয়ারা, বোয়ালগাঁও, চাতরী ইউনিয়নের কেয়াগড়, ইছামতি, কৈনপুরা, নোয়ারাস্তা, বারখাইন ইউনিয়নের ধানপুরা, ঝিওরি, শিলাইগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে। বর্ষা এলেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় মূল সড়ক। জোয়ারের তোড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক খাল।
নোয়ারাস্তা-কৈখাইন খালের মুখ বন্ধ করে স্লুইচগেট নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। ২০০৫ সালে এ নিয়ে এলাকায় মিছিল-সমাবেশও হয়। অবশেষে ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের চেষ্টায় ইছামতি খালের মুখে বাঁধ (ক্লোজার) নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাবের এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাবের আহমেদ চৌধুরী জানান, ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্পে ৬৫ মিটার গভীর, ৪০-৫০ ফুট প্রস্থ খালের মুখে বাঁধ দেওয়ার পাশাপাশি ৫০০ মিটার নতুন খাল খনন করা হবে। কৈখাইনের বাসিন্দা ও আনোয়ারা উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি মো. কুদ্দুস বলেন, এই বাঁধের ফলে বিশাল এলাকা ভাঙন থেকে মুক্তি পাবে। চাষাবাদে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্নপূরণ হবে।
প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর গত ১৬ ডিসেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীরের নেতৃত্বে সরেজমিনে কাজ দেখতে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম দাশ ও শাখা কর্মকর্তা ফারাইজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা প্রকল্পের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরা বলেন, ইছামতি খালের মুখে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এলাকার চাষাবাদ, ভাঙন রোধসহ ব্যাপক উন্নয়ন হবে।