২৯ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

আরো দুদিনের সতর্কতা জারি, চার জেলায় ৫ মৃত্যু চট্টগ্রামসহ কিছু এলাকায় কাল থেকে বৃষ্টির আভাস

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১ মে, ২০২৪ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে ২৯ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখল দেশবাসী, যা ১৯৭২ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, গতকাল যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এর আগে ১৯৯৫ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। আর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৭২ সালের ১৮ মে, ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে তীব্র গরমে চার জেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে এক সপ্তাহে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।

গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছর টানা ৩১ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা ৭৬ বছরের মধ্যে রেকর্ড।

দেশজুড়ে টানা ৩১ দিনের দাবদাহের মধ্যেই স্বস্তির বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি হবে। সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, তারপর সেন্ট্রালসহ পশ্চিম অংশে বৃষ্টি হবে। আস্তে আস্তে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। তখন সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে তাপমাত্রা। আগামী ৭ মে’র মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসবে বলে জানান তিনি। এদিকে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে নতুন করে আরও দুদিনের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত গতকাল সন্ধ্যার সতর্কবার্তায় বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের পশ্চিমাংশে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।

পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে ৫৩০ এপ্রিল টানা ২৬ দিন টানা তাপপ্রবাহ ছিল। ২০১৬ সালে ৬৩০ এপ্রিল টানা ২৫ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। ২০২৩ সালে ১৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

এবার তাপপ্রবাহের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, সবসময়ই এসব এলাকায় তাপমাত্রা বেশি আসে, বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। কারণ এই এলাকাগুলো ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গের পাশে। ওইসব এলাকায় ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছে গতকাল, সেটার আঁচ এসেই পড়ে এখানে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শেষ তিন দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটি পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই গরম বেশি পড়ছে।

চার জেলায় ৫ মৃত্যু : দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহ জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর মধ্যে প্রচণ্ড গরমে নাটোর, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তাদের মৃত্যু হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র গরমের মধ্যে হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতাসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

এক সপ্তাহে হিট স্ট্রোকে ১০ মৃত্যু : দেশে চলমান দাবদাহের মধ্যে হিট স্ট্রোক আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, গত ২২ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ জন হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুরে মারা গেছেন দুজন। আর চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় মৃত্যু হয়েছে একজন করে। দেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা সরকারি হাসপাতাল এবং সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাঠানোর তথ্যের ভিত্তিতে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসভাপতি ড. মাহবুবুর রহমান, সা. সম্পাদক ড. আবু নোমান
পরবর্তী নিবন্ধস্কুল বন্ধের আদেশ পাইনি : নওফেল