ফটিকছড়িতে ছাত্রলীগ নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৯ বছরেও শিবির ক্যাডার নাসির উদ্দিনের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ক্ষোভের কথা জানান।
গত ১ মার্চ দৈনিক আজাদী পত্রিকায় ‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হত্যা চেষ্টা মামলা : শিবির ক্যাডার নাসিরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসেনি কেউ’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে নিজের অবস্থান জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ।
ওই মামলার এক নম্বর আসামি নাসিরসহ সবার মৃত্যুদণ্ড দাবি করে মোশাররফ বলেন, বিচার বিলম্ব হলে বিচার পাওয়া না পাওয়া সমান হয়ে যায়। ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের ৮ মে ছাত্রলীগের সম্মেলনে আমি ফটিকছড়ি গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারও ছিলেন। সম্মেলনের একপর্যায়ে দুপুর ১টার দিকে শিবিরের একটি সশস্ত্র বাহিনী ট্রাকে এবং বাসে এসে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালায়। সেখানে আমাদের ছাত্রলীগ কর্মী জমির উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একসময় আমি এবং রফিকুল আনোয়ার পার্শ্ববর্তী স্কুলের অফিসে আশ্রয় নিই।
তিনি বলেন, পুলিশ কিছুই করেনি। তারা তাকিয়ে ছিল। সম্মেলন পণ্ড হয়ে গেল। আমরা জমিরের জানাজা পড়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। আমি ভেবেছিলাম, হাটহাজারী হয়ে গেলে আমাদের ওপর শিবিরের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করতে পারে। তখন রুট পরিবর্তন করি। ফটিকছড়ির নানুপুরে গেলাম। সেখান থেকে রাউজান দিয়ে শহরে যাব ঠিক করলাম। আমরা যে গাড়িতে যাচ্ছিলাম সেটি আমার নতুন গাড়ি ছিল।তিনি বলেন, সামনের সিটে বসালাম আমাদের দলের নেতা হারুন বশরকে। সন্ধ্যার পর আমরা মোহাম্মদ ত্বকীর হাটে পৌঁছালাম। হঠাৎ ২০-২৫ জন সশস্ত্র লোক এসে আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে। এক মিনিটের মধ্যে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে বললাম, আমি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তোমরা কি চাও? হারুন বশরকে গাড়ি থেকে বের করে চাকার ওপর বসাল। ব্রাশফায়ার করার মুহূর্তে আমি সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি বললাম, সে একজন পঙ্গু মানুষ, তাকে ছেড়ে দাও। ডোন্ট কিল হিম, ইফ ইউ ওয়ান্ট কিল মি। তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে হারুন বশরকে খুন করল।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, এরপর আমার মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে নাছির বলল, আঁরে চিনি ল, আঁর নাম নাসির। আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হল। রাইফেলের বাট দিয়ে আমাকে বেদম মারধর করল। তখন আমার গাড়ির পেছন থেকে তখনকার ছাত্রলীগ নেতা জসীম উদ্দিন শাহ, ইউনূস গণি, মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ বের হয়ে আসল।
সন্ত্রাসীরা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ধর, ধর বলে তাদের ধাওয়া শুরু করল। এই সুযোগে আমি পাশের একটি খালে লাফ দিই। সেখানে পাটিপাতা ছিল, এর ভেতরে আমি শুয়ে থাকি। সন্ত্রাসীরা আবার ফিরে এসে এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ার শুরু করল। কিন্তু অন্ধকারে তারা আমাকে দেখতে পায়নি। আমাকে না পেয়ে চলে গেল। আমি হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে খালপাড় থেকে কিছুদূর গেলাম। হেঁটে স্থানীয় আবদুল্লাহপুর বাজারে পৌঁছলাম।
মোশাররফ হোসেন বলেন, এই ঘটনা এখানে যা বললাম, হুবহু আদালতে আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। জজ সাহেবের সামনে বলেছি। আমি নাসিরকে কাঠগড়ায় শনাক্ত করেছি। এটা আমার চোখে দেখা। আমার চোখের সামনে হত্যাকণ্ড হয়েছে। নাসিরকে তো অবশ্যই ফাঁসি দেওয়া উচিত। সে এক নম্বর আসামি। সাক্ষীর অভাবে বিচার হচ্ছে না, এটা ভুল বক্তব্য। আমি নিজে সাক্ষ্য দিয়েছি। আমার গাড়িচালক ইদ্রিস, মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ তো এখনও আছে। প্রয়োজনে আদালতে তাদের জিজ্ঞেস করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, সহ-সভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত ও জসীম উদ্দিন শাহ, দপ্তর সম্পাদক মো. নুর খান, উপ-দপ্তর সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদ, সদস্য বেদারুল আলম চৌধুরী, বকতিয়ার সাইদ ইরান, হাসিবুল সোহাগ চৌধুরী এবং উত্তর জেলা মহিলা লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন।