২৮ কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৮,৫৫৬ কোটি টাকা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চার লেইন প্রতি কিমিতে খরচ ৩০৬ কোটি টাকা

| বুধবার , ১ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামকক্সমবাজার মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৫১ কিলোমিটার হলেও চার লেইন হতে যাচ্ছে মাত্র ২৮ কিলোমিটারের মতো। এতে ব্যয় হবে আকাশচুম্বী। গতকাল একনেক সভায় ‘চট্টগ্রামকক্সবাজার হাইওয়ে ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট১’ শীর্ষক এ প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কিলোমিটার সড়ককে চার লেইনে উন্নীত করা হবে। সেতু নির্মাণ করা হবে ১ হাজার ৪৪৮ মিটার। উড়াল সেতু নির্মাণ হবে ২ দশমিক ৬১ কিলোমিটার। এছাড়া ওই মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সড়ক সংলগ্ন পটিয়া, দোহাজারী, কেরানীহাট, লোহাগাড়া ও চকরিয়া বাজারের উন্নয়ন করা হবে। খবর বিডিনিউজের।

সব মিলিয়ে প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। তার মানে ২৮ কিলোমিটারের এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, দেশের অবকাঠামো নির্মাণের ইতিহাসে এত ব্যয়ে আর কোনও মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়নি।

এ প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা আসবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) ঋণ হিসেবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৮০ দশমিক ৭৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ২৫ লাখ ৮৪ হাজার ঘনমিটার মাটির কাজ এবং ২২ কিলোমিটার পেভমেন্ট করতে হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে চার লেইনের প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১৮ কোটি থেকে ৩৪ কোটি টাকা পর্যন্ত।

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কই দেশে প্রথম চার লেইনে উন্নীত হয়। ১৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই মহাসড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছিল ২১ কোটি টাকা। জয়দেবপুরময়মনসিংহ চার লেইন প্রকল্পেও একই ব্যয় হয়েছে। এরপর যাত্রাবাড়ীকাঁচপুর আট লেইন প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ২২ কোটি টাকা। দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও এশিয়ান হাইওয়ের অংশ রংপুরহাটিকুমরুল চার লেইনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। সিলেট থেকে তামাবিল ফোর লেইন সড়ক নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ৬৪ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালের রেট শিডিউলে নির্মাণাধীন চার লেইনের ঢাকাসিলেট মহাসড়কে ব্যয় হচ্ছে কিলোমিটারে ৮২ কোটি টাকা। সে হিসাবে চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কের জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা ঢাকাসিলেট মহাসড়কের তুলনায় প্রায় ২৭৩ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, আসলে এই (চট্টগ্রামকঙবাজার) ফোর লেইনটি অন্যান্য ফোর লেইনের চেয়ে একটু ভিন্ন হবে। এ মহাসড়কের জন্য বিশেষ উদ্যোগী জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাজাইকা। মহেশখালীতে জাপানি অর্থায়নে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ আমদানিরপ্তানি পণ্য দেশে এবং প্রতিবেশী দেশে পরিবহন হবে। রাস্তাটি আন্তর্জাতিক মানের বিশেষ করে জাপানের মানে করে নির্মাণ করতে চায় দেশটি।

প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় আরও বেশি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের ব্যয় বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে আমরাও মনে করি। তাই গত আগস্ট মাসে হওয়া প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি আমরা চূড়ান্ত করতে পারিনি। তখন প্রকল্পটিতে ১২ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু আমরা এই প্রস্তাবের সাথে একমত হতে পারছিলাম না। এরপর আমি নিজে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কার্যক্রম এবং এর ধরন পরিদর্শন করে এসেছি। এরপর আমরা ভৌত অবকাঠামো বিভাগ নানাভাবে বিশ্লেষণ করেছি। এরপর এই ব্যয় যৌক্তিক বলে আমাদের মনে হয়েছে। তারপর এই (পাস হওয়া) ব্যয়ে প্রস্তাব করে আমরা একনেক সভায় চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি।

চট্টগ্রামকঙবাজারের মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৫১ কিলোমিটার হলেও মাত্র ২৮ কিলোমিটার চার লেইন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এই প্রকল্প চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কের পুরোটি নির্মাণে নয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব এলাকায় সমস্যা রয়েছে সেসব সমস্যা সমাধান করা হবে। এরপর আরেকটি প্রকল্প দিয়ে ওই মহাসড়কটির পুরোটা ফোর লেইনে উন্নীত করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযথাসময়ে নির্বাচন, খুনিদের সঙ্গে সংলাপ নয়
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী গ্রেপ্তার