২৪ লাখ শিশুর প্রাণ বাঁচানো হ্যারিসনের মৃত্যু

| মঙ্গলবার , ৪ মার্চ, ২০২৫ at ১২:২১ অপরাহ্ণ

যার রক্তরসে বেঁচে গেছে ২৪ লাখ শিশুর প্রাণ, অস্ট্রেলিয়ার সেই জেমস হ্যারিসন আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। খবর বিডিনিউজের।

তার পরিবার সোমবার জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের একটি নার্সিং হোমে ঘুমন্ত অবস্থায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়। বিবিসি লিখেছে, অস্ট্রেলিয়ায় গোল্ডেন আর্ম হিসেবে পরিচিত হ্যারিসনের রক্তে বিরল অ্যান্টিবডি ছিল।

যেসব গর্ভবতীর রক্তে তাদের অনাগত শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, সেই সব মায়েদের ওষুধ তৈরিতে অ্যান্টিডি ব্যবহৃত হয়। হ্যারিসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিস বলেছে, ১৪ বছর বয়সে বুকে বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত নেওয়ার পর তিনি রক্তদাতা হওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

তিনি ১৮ বছর বয়সে রক্তরস (প্লাজমা) দান শুরু করেছিলেন, যা অব্যাহত রেখেছিলেন ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত। দুই সপ্তাহ অন্তর তিনি রক্ত দিতেন। বিবিসি লিখেছে, হ্যারিসন রক্তের প্লাজমা দানের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন ২০০৫ সালে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি ২০২২ সালে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন ওই অস্ট্রেলিয়ান। হ্যারিসনের মেয়ে ট্রেসি মেলোশিপ বলেন, কোনো খরচ বা কষ্ট ছাড়াই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন বাঁচাতে পেরে বাবা গর্ববোধ করতেন।

তিনি সবসময় বলতেন, রক্তদানে কোনো কষ্ট নেই এবং কারো জীবন বাঁচালে একদিন আপনিও তেমন সহায়তা পেতে পারেন। মেলোশিপ এবং হ্যারিসনের দুই দৌহিত্রও অ্যান্টিডি টিকা গ্রহণ করেছেন। আমাদের মত অনেক পরিবারের কথা শুনে জেমস খুশি হয়েছিল, তার দয়ার কারণে ওইসব পরিবার টিকেছিল। বিবিসি লিখেছে, অ্যান্টিডি টিকা অনাগত শিশুকে রক্তের একটি প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষা করে, যা ভ্রুণ বা নবজাতকের হিমোলাইটিক ডিজিজ বা এইচডিএফএন নামে পরিচিত। গর্ভাবস্থায় যখন মায়ের লাল রক্তকণিকার সঙ্গে অনাগতের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়, তখন এই পরিস্থিতি ঘটে।

মায়ের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন শিশুর রক্তকোষকে হুমকি হিসেবে দেখে এবং তাদের আক্রমণের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তাতে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, মারাত্মক রক্তস্বল্পতা, হার্ট ফেইলিওর, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে অ্যান্টিডি টিকা আসার আগে এইচডিএফএন নির্ণয় হওয়া প্রতি দুটি শিশুর মধ্যে একটি মারা যাচ্ছিল। হ্যারিসনের রক্ত কীভাবে অ্যান্টিডি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তা স্পষ্ট নয়, তবে কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ১৪ বছর বয়সে তার বিপুল রক্তগ্রহণের সঙ্গে সেটির যোগ থাকতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসরায়েলি বাধায় গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ, দুর্ভিক্ষের শঙ্কা
পরবর্তী নিবন্ধচান্দগাঁও থানার অভিযানে চারজন গ্রেপ্তার