অবশেষে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য বোঝাই কন্টেনার আনা নেয়া শুরু হয়েছে। নিয়োগপত্র ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণসহ চার দফা দাবিতে ধর্মঘট শুরু করায় চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার পরিবহন মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বন্ধ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ট্রেইলার, কংক্রিট মিক্সার, ফ্ল্যাটবেড ও ডাম্প ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন ৪ দফা দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন। পরে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দাবি দাওয়া মেনে নেয়া হলে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরই গত মধ্যরাত থেকে প্রাইম মুভার চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠে।
সূত্র জানিয়েছে, চাকরির নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং সরকার ঘোষিত মজুরির দাবিতে গত ২১ অক্টোবর সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ট্রেইলার, কংক্রিট মিঙচার, ফ্ল্যাটবেড ও ডাম্প ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন। যথাসময়ে ধর্মঘট শুরু করা হয়। টানা ৩৪ ঘণ্টা কর্মবিরতির পর সমঝোতার আশ্বাস পেয়ে তারা কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছিল। ওইদিন বলা হয়েছিল ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে মালিক–শ্রমিক উভয়পক্ষ অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বসবেন। কিন্তু সেটা ২৪ অক্টোবর না হয়ে ২৮ অক্টোবর বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পরদিন ২৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস কক্ষে শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালকের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। কিন্তু ওই সভায় নিয়োগপত্র প্রদানে মালিকপক্ষ আপত্তি জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা।
শ্রমিক নেতারা বলেন, আগের ধর্মঘটের সময় তারা আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিআরটিএ ও শ্রম অধিদপ্তর এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা দুই দফা বৈঠকে বসেন। তবে মালিকপক্ষ বিভিন্ন সময় দাবি মানার আশ্বাস দিলেও তারা শেষ মিটিংয়ে আইনি জটিলতার কথা বলে নিয়োগপত্র দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। আমরা তো আইনি জটিলতা দেখছি না। মালিকপক্ষ ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাও সেটার বিপক্ষে না। তাই আমরা মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে আবার কর্মবিরতি শুরু করেছি।
ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার পরিবহন বন্ধ হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বৈঠক চলে। বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদানের দাবি মেনে নেয়া হলে শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া এবং নিয়োগপত্র প্রদান করায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে দৈনিক আজাদীকে জানান।