ফুটবলের আসরে তেমন সাফল্য নেই কলম্বিয়ার। নিজেদের মহাদেশের সেরা ফুটবল আসর কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালে জায়গা করেছে তিনবার। একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ খেলছে দলটি। টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিত রয়েছে দলটি। একারের কোপা আমেরিকা কাপেও অপরাজিত থেকে ফাইনালে জায়গা করে নিল কলম্বিয়া ২৩ বছর পর। ২০০১ সালের সবশেষ ফাইনালে খেলেছিল কলম্ব্বিয়া। সেবার মেঙিকোকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এবার আবারো ফাইনালে কলম্বিয়া। কোপা কাপে আরেক উড়ন্ত দল উরুগুয়েকে হারিয়ে ফাইনালে কলম্বিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অব আমেরকিা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে ১–০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনার সামনে পড়ছে কলম্বিয়া। আর এই হারে থামল উরুগুয়ের স্বপ্ন যাত্রা। পুরো দ্বিতীয়ার্ধ দশ জন নিয়ে খেললেও সেটাকে কাজে লাগাতে পারেনি উরুগুয়ে। সেই ৩০ মিনিটে দেওয়া গোল ধরে রেখে ফাইনালে জায়গা করে নিয়ে ইতিহাস গড়ল কলম্বিয়া। আগামী সোমবার ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে হামেস রদ্রিগেজের কলম্বিয়া।
এদিকে সেমিফাইনালে হারের ফলে আর্জেন্টিনার সাথে যৌথভাবে রেকর্ড ১৫ বারের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে এককভাবে শীর্ষে যাওয়ার সুযোগ হারাল। এখন আর্জেন্টিনার সামনে সে সুযোগ। সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। খেলার শুরু থেকেই দু দল আক্রমনাত্নক ফুটবল খেলতে থাকে। তবে সুযোগ সৃষ্টির দিক থেকে এগিয়ে ছিল উরুগুয়ে। কিন‘ সুযোগ গুলোকে কাজে লাগাতে পারেনি তারা। প্রথমার্ধে অনেক সুযোগ হাতছাড়া করে উরুগুয়ে। প্রথম ১৭ মিনিটে খুব ভালো জায়গা থেকে দুটি শটের কোনোটিই লক্ষ্যে রাখতে পারেননি দারউইন নুনেস। উল্টো খেলার ৩৯ মিনিটে এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। রদ্রিগেসের কর্নারে সবচেয়ে উঁচুতে লাফিয়ে হেডে জাল খুঁজে নেন লের্মা। এগিয়ে যাওয়ার উল্লাসে মাতে কলম্বিয়া। চলতি আসরে এটি কলম্বিয়া অধিনায়কের ষষ্ঠ অ্যাসিস্ট। খেলার ৩১ মিনিটে প্রথম হলুদ কার্ড দেখা ড্যানিয়েল মুনজ প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে কনুই দিয়ে আঘাত করলে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে লাল কার্ড দেখে।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে উরুগুয়ে। কিন্তু দশ জন নিয়েও তেমন রক্ষণাত্মক খেলেনি কলম্বিয়া। নিজেদের দুর্গ পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি আক্রমণে উঠেছে কলম্বিয়া। প্রতিপক্ষের একজন কম থাকার সুযোগ নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে পুরোটাই আধিপত্য ধরে রাখে উরুগুয়ে। আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসে নুনেজরা। ব্যস্ত রাখেন কলম্বিয়ার রক্ষন। তবে বাজে ফিনিশিংয়ে গোলের দেখা পায়নি উরুগুয়ে। খেলার ৬৭ মিনিটে অভিজ্ঞ লুইস সুয়ারেস মাঠে নামলে আক্রমণের ধার বাড়ে উরুগুয়ের। কিন্তু সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি তারা। যদিও মাঠে নামার পরপরই একটি সুযোগ পেয়েছিলেন সুয়ারেজ। কিন্তু তার শট ফিরে বারে লেগে। শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ানোর দুটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন কলম্বিয়ার মাতেউস উরিবে। ফলে হতাশ হতে হয় মার্সেলো বিয়েলসার দলকে। অথচ মার্সেলো বিয়েলসার উরুগুয়েকে বলা হচ্ছিল, এবারের কোপা আমেরিকার অন্যতম সেরা এক দল। উরুগুয়ের পক্ষে বাজি ধরেছিলেন অনেকেই। কিন্তু নেস্তোর লরেঞ্জোর কলম্বিয়া যেন রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য এক দলে পরিনত হয়েছে। ম্যাচটিতে কলম্বিয়া জিতলেও দুই দলের কারো খেলাতেই দেখা যায়নি লাতিন ছন্দ। বরং শরীরী ফুটবলের লড়াই দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। ৬ হলুদ কার্ড, ১ লাল কার্ড আর ২৪ ফাউলের ম্যাচের ফল নির্ধারণ করলেন জেফারসন লারমা। বাংলাদেশ সময় আগামী সোমবার মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে এবারের কোপা আমেরিকার ফাইনালে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। এর আগে একবারই দুই দলের দেখা হয়েছিল কোপা আমেরিকার ফাইনালে। ১৯৯১ সালের সেই ফাইনালে ২–১ গোলে জয় নিয়ে ফিরেছিল আর্জেন্টিনা।