দেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ২২টি স্টেন্ট বা রিংয়ের দাম কমানো হয়েছে। নতুন এ মূল্য তালিকায় হৃদরোগের চিকিৎসায় জরুরি এ উপকরণের প্রকারভেদে সর্বনিম্ন মূল্য ২০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার টাকা বেঁধে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে দাম কমানোর তথ্য জানানো হয়।
অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, এটা দাম বাড়ানো–কমানোর ধারাবাহিকতার একটা অংশ। আমরা দীর্ঘ দিন থেকে স্টেন্টের দাম কমানোর চেষ্টা করছিলাম। এর প্রেক্ষিতেই এটা করা হয়েছে। এখন থেকে সবাই এই দামে স্টেন্ট বিক্রি করবেন। সবগুলো হাসপাতালে নতুন এই মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশের তৈরি ২৬ ধরনের স্টেন্ট ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। মাস কয়েক আগে তিনটি স্টেন্টের দাম কমানো হয়েছিল, যেগুলো এখন অপরিবর্তিত রয়েছে। আর নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, একটি কোম্পানির স্টেন্টের দাম আগের চেয়ে সামান্য বেড়েছে।
ধমনীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া সচল রাখতে এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে স্টেন্ট বা করোনারি স্টেন্ট পরানো হয়। প্রচলিত ভাষায় এটি রিং হিসেবে পরিচিত।
এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ওষুধ প্রশাসন যখন স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করে দেয় তখন আমদানিকারকদের একটি বড় অংশ নতুন দাম নিয়ে আপত্তি তুলেছিলে সরবরাহ বন্ধ রেখেছিলেন। বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছিল। তবে মঙ্গলবার নতুন দাম নির্ধারণের পর এটি নিয়ে খুব একটা আপত্তি না থাকার কথা বলেছেন মেডিকেল ডিভাইস ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়াসিম আহমদ।
তিনি বলেন, ডলার, ইউরোর যা দাম তাতে এখন যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাও কম। এখন যা দাম আছে আমাদের ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের বলতে হবে দেশের সরকার নিয়ম করেছে, তাদের কাছ থেকে কিছু বেনিফিট নিয়ে… অ্যাডজাস্ট করে আমরা আপাতত সারভাইভ করব।
মঙ্গলবার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ও অন্যান্য দেশের হার্টের রিং উৎপাদনকারী কোম্পানির প্রতিনিধি এবং ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির হার্টের রিংয়ের দাম কমানো হয়েছে।
কোন রিংয়ের কত দাম : পোল্যান্ডের তৈরি অ্যালেঙ প্লাস ব্র্যান্ডের দাম ৮০ হাজার থেকে কমিয়ে ৬০ হাজার টাকা, অ্যালেঙ ব্র্যান্ড ৬২ হাজার ৯২২ থেকে কমিয়ে ৬০ হাজার টাকা, অ্যাবারিস ব্র্যান্ড ৬১ হাজার ৯২১ থেকে কমিয়ে ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছে। জার্মানির করোফ্ল্যাঙ আইএসএআর ব্র্যান্ডের দাম ৫০ হাজার ১১৯ থেকে কমিয়ে ৫৩ হাজার টাকা, করোফ্ল্যাঙ আইএসএআর নিও ব্র্যান্ড ৭৩ হাজার ১২৬ থেকে কমিয়ে ৫৫ হাজার টাকা, জিলিমাস ব্র্যান্ড ৬০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫৮ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের ওরসিরো ব্র্যান্ডের দাম ৭৬ হাজার থেকে কমিয়ে ৬৩ হাজার টাকা, ওরসিরো মিশন ৮১ হাজার থেকে কমে ৬৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার তৈরি জেনোস ডেস ব্র্যান্ডের দাম ৬৫ হাজার ৫০০ থেকে কমিয়ে ৫৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। স্পেনের ইভাসকুলার এনজিওলাইটের দাম ৮৭ হাজার থেকে কমিয়ে ৬২ হাজার টাকা করা হয়েছে।
জাপানের আল্টিমাস্টারের দাম ৮৩ হাজার ২০০ থেকে কমিয়ে ৬৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের অ্যাবলুমিনাস ডেস প্লাসের দাম ৭১ হাজার ২০০ থেকে কমিয়ে ৬৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। ভারতে তৈরি মেটাফর ব্র্যান্ডের দাম ৪৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা, এভারমাইন ফিফটি ব্র্যান্ড ৯৫ হাজার ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, বায়োমাইম মর্ফ ৯৫ হাজার ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, বায়োমাইমের ৬৫ হাজার ৫৯৫ থেকে কমিয়ে ৪৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাফিনিটি–এমএস মিনির দাম ৯১ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা, ডিরেক্ট–স্টেন্ট সিরো ৯৬ হাজার ৭৩২ থেকে ৬৬ হাজার টাকা এবং ডিরেক্ট–স্টেন্ট ৩৩ হাজার ৫৯২ থেকে কমিয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের তৈরি বায়োমেট্রিক্স নিওফ্ল্যাক্সের দাম ৭৬ হাজার থেকে কমিয়ে ৬০ হাজার টাকা, বায়োমেট্রিঙ আলফা ৮৬ হাজার ৩৬ থেকে ৬৬ হাজার টাকা এবং বায়োফ্রিডম ১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ থেকে কমিয়ে ৬৮ হাজার করা হয়েছে।