২২ জেলায় শিল্পকলায় হামলা,ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ চুরি

| শনিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে অন্তত ২২ জেলা ও উপজেলার শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা, ভাঙচুর করে সেখানে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব হামলায় ভাঙচুর করা হয়েছে সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র, অডিটোরিয়াম। অফিসের ক্যামেরা, প্রজেক্টর, কম্পিউটার লুটপাটের পাশাপাশি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির কাগজপত্র।

আক্রান্ত শিল্পকলা একাডেমিগুলোর কালচারাল অফিসারদের পাঠানো তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় শিল্পকলা একাডেমি একটি প্রতিবেদনও তৈরি করছে। সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জেলাউপজেলা পর্যায় থেকে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি সব মিলিয়ে ২২টির বেশি শিল্পকলা একাডেমিতে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা হারমোনিয়াম, তানপুরাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, কম্পিউটার, প্রজেক্টর, ক্যামেরাসহ মিলনায়তনের জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুট করে নিয়ে গেছে বলে জেলা শিল্পকলা একাডেমিগুলো আমাদের জানিয়েছে। কয়েকটি জেলায় সিসি ক্যামেরাও নষ্ট করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে প্রশ্নে তিনি বলেন, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। তবে ঢাকার কেন্দ্রীয় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকার কারণে সেটি সুরক্ষিত রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেশিরভাগ জেলাতেই শিল্পকলার কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিস করা শুরু করেননি বলেও জানান এই জনসংযোগ কর্মকর্তা। ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে অফিসে আসছেন না। তাকে ফোন করলেও সাড়া মেলেনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে থেকেই কয়েকটি জেলায় শিল্পকলা একাডেমিতে হামলার খবর আসে। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতির দেশত্যাগের পর এসব হামলা মাত্রা ছাড়ায়। ওইদিন দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয় বলে জানান জেলা কালচারাল অফিসার মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, হামলাকারীরা এসে আগুন ধরিয়ে দেয়, ভাঙচুর করে। মহড়াকক্ষ, আসবাবপত্র, কন্ট্রোল রুম, মিলনায়তন, মঞ্চ ও দর্শক গ্যালারিসহ বিভিন্ন জিনিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় পানি ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব হয়।

লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমির সংশ্লিষ্টরা। ওই দিন চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমিতেও আগুন দেওয়া, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা হয়েছে। জেলার কালচারাল অফিসার দিতি সাহা বলেন, রাতের বেলা ওই হামলা হয়। আগুন দেওয়ার পরও ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। বইপত্র, বাদ্যযন্ত্রসহ নানা সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায়। টয়লেটের কমোড পর্যন্ত ভেঙেছে।

একাডেমির দায়িত্বরতরা প্রাণের ভয়ে সেখানে ছিলেন না জানিয়ে দিতি সাহা বলেন, আমাদের কেউ হামলার শিকার হননি। তবে সেখানে উপস্থিত থাকলে হামলার শিকার হতেন, এজন্য আমরা কেউ ওখানে ছিলাম না।

সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়নি, তবে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানান ওই জেলার কালচারাল অফিসার ফাইজা হোসেন অন্বেষা। তিনি বলেন, আমাদের এখানে হামলা হয়নি। তবে সহিংসতার সময় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আমাদের নৈশপ্রহরী প্রবাল কুমার সানা নিজ পৈতৃক বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। আমাদের স্টাফরাও প্রাণের ভয়ে অফিসে ছিলেন না। এই সুযোগে তালা ভেঙে অর্থমূল্য, প্রজেক্টর, ক্যামেরা, কীবোর্ড, বক্সক্যাবল, তানপুরাসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করে নিয়ে।

এর আগের দিন ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় অফিসকক্ষসহ মনসুর আলী অডিটরিয়ামে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, লুট করা হয় মালামাল। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চালানো হয়। হামলার পরপরই সেনাসদস্যরা উপস্থিত হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তবে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে ফের হামলার শঙ্কা প্রকাশ করছেন কর্তৃপক্ষ। হামলা হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতেও। ইটপাটকেলের আঘাতে একাডেমির স্থাপনার জানালার কাচ ভেঙেছে, তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, নওগাঁর কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। নওগাঁর পত্নীতলায় ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী কমপ্লেক্সে হামলা ও চুরির ঘটনা ঘটেছে। লাইট, তারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

বুধবর মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কয়েক দফা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাত ১১টায় দ্বিতীয় দফায়ও ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এছাড়া বরগুনা, সুনামগঞ্জ, রংপুর, খুলনা, মানিকগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইলেও হামলা হয়েছে। ভয়ে অনেকে কর্মকর্তা অফিসে যাচ্ছেন না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগভর্নরের পদ ছাড়লেন আব্দুর রউফ তালুকদার
পরবর্তী নিবন্ধড. ইউনূসের নামে মাথা তুলে রয়েছে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ