অপহরণের ২২ ঘণ্টা পর গত শুক্রবার গভীর রাতে চোখ বাঁধা অবস্থায় সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে নগরীর জিইসি মোড়ে রেখে যাওয়া হয়। মোটরসাইকেলযোগে তাকে নিয়ে এসে যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার লোকজন সেখানে রেখে যান বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। পরে একটি সিএনজি টেক্সিতে করে তিনি বাসায় পৌঁছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, হালিশহর এলাকা থেকে বিকালে অপহরণের পর যখন পুলিশ সাইফুল ইসলামের খোঁজ পাচ্ছিল না, তখন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে প্রশাসনের অব্যাহত চাপ এবং মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের সমঝোতা বৈঠকের পর অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়। ঘটনার দিন অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধ্যায় হালিশহর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম আজাদীকে জানিয়েছিলেন, এটা অপহরণের ঘটনা নয়। ব্যবসায়িক বিরোধ। এখন উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক চলছে।
সিএমপির অপর এক কর্মকর্তা শুক্রবার রাতে আজাদীকে জানান, ঘটনা জানাজানি হলে শুক্রবার মধ্যরাতে অপহরণের দায়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা নগর আওয়ামী লীগের এক নেতার বাসায় আশ্রয় নেন। সেখানে নগর যুবলীগের একাধিক শীর্ষ নেতাও উপস্থিত হন। খবর পেয়ে অভিযানকারী দল অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধারে প্রথমে অভিযুক্ত রানার মেহেদীবাগের বাসায় অভিযান চালায়। সেখানে না পেয়ে তার পুরনো বাড়ি চান্দগাঁওয়ের গোলাম নাজির আলী বাড়িতেও অভিযান চালায়। কিন্তু কোনো জায়গায় থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আটক হয়নি নওশাদ মাহমুদ রানা ও তার সহযোগীরা।
পরে ওই আওয়ামী নেতার বাসায় ভিকটিমের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, যুবলীগের শীর্ষ এক নেতা ও হালিশহর থানা পুলিশের একটি টিম বৈঠক করে। এরপরই মূলত ব্যবসায়ী সাইফুলকে মুক্তি দিতে তারা সম্মত হয়। মীরসরাইয়ের অধিবাসী সাইফুল পরিবার নিয়ে নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে বসবাস করেন।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা ও কয়েকজন সহযোগীকে আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা (১৯/২০২০) দায়ের করেন অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী সাইফুলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। এতে নওশাদ মাহমুদ রানা ছাড়াও নওশাদের ভাই পাপ্পু, মোহাম্মদ মাসুদ ওরফে পাগল মাসুদ, বউবাজার ঈদগাঁ এলাকার ইকবাল, সাখাওয়াতসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।
দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে নিজের প্রাইভেটকারে চড়ে হালিশহর থানার বউবাজার এলাকার দুলহান কমিউনিটি সেন্টারে এক আত্মীয়ের বিয়েতে অংশ নেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে গাড়িতে উঠতে গেলে যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা, তার গাড়িচালক মুহাম্মদ ইকবালসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে মারধর করে একটি সিলভার রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন বাধা দিলে তাদেরও লাঠিসোটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকলে তারা ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়।