আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। এ দিন গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রাম ও সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে সংগঠনটি ৩১ বছরে পদার্পণ করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি আন্দোলন, সংগ্রাম ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সবসময় মাঠে থাকলেও চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। তিন বছর মেয়াদের কমিটির ২০ সদস্যের আংশিক কমিটিতে দুই গ্রুপের বিরোধেই আড়াই বছর কেটে গেছে। কমিটির ঘোষণার পর থেকেই দুই গ্রুপের বিরোধে গত আড়াই বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়নি। নগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চেয়ে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় দুই গ্রুপের বিরোধে চার মাস স্থগিত ছিল চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি। গত ১৬ জুলাই কেন্দ্র থেকে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এখনো সেই বিরোধ কাটিয়ে উঠতে পারেনি নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা।
২০২২ সালের ৯ মার্চ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি এবং আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০ সদস্যের চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটি তিন বছরের জন্য অনুমোদন দেন। কমিটিতে ১১ জন সহ সভাপতি এবং তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং প্রচার সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। ঐদিনের অনুমোদিত ২০ সদস্যের আংশিক কমিটির নিচে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করা হলেও আড়াই বছরে এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। ২০ সদস্যের আংশিক কমিটির দুই গ্রুপের বিরোধের মাঝেই কেটে গেছে আড়াই বছর।
গত ১৪ মার্চ গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ। গভীর রাতে নিজস্ব ফেসবুকে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের আংশিক কমিটির অপর গ্রুপের (৭ সহ সভাপতি, ৩ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২ জন সাংগঠনিক সম্পাদক) ১২ নেতা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই ১২ নেতা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
একতরফা ভাবে রাতের আঁধারে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই ১২ নেতা। দলীয় শৃক্সখলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই সময় ১৮ মার্চ নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উভয় পক্ষকে শোকজ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
সংগঠনের শৃক্সখলা এবং গঠনতন্ত্র না মেনে গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করায় নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককেও একই দিন কেন্দ্র থেকে শোকজ করা হয়েছিল। পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে এই শোকজের সন্তোষজনক লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ঐ সময়। একই সাথে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্যও ওইদিন নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গত ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়– স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক অনুমোদিত নগরীর এই ১৯টি ইউনিটের (নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডের) কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একই সাথে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের উপর দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধভাবে কোটাবিরোধী আন্দোলন রাজপথে থেকে প্রতিহত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু এই নির্দেশনা প্রদান করেন।
সাংগঠনিক কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার পরও চট্টগ্রামে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে জামায়াত–শিবিরের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে নামতে পারেনি চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা।