৫০ গ্রাম ভরের ২০০টি ভ্যাকসিনের ভায়াল (বোতল) নিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরের গন্তব্যে পৌঁছাবে ড্রোন। ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেই ভ্যাকসিন বহন ও নিরাপদে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে লোড আনলোড করতে হবে মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ৪ সদস্যের টিম ‘অকুতোভয়’ এসব চ্যালেঞ্জের সমাধান করে নকশা করেছেন একটি আধুনিক ড্রোনের। এ ৪ সদস্যের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রামের। গত ১৫-১৮ এপ্রিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটস অব টেকনোলজি (আইআইটি) আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ টেকফেস্ট ‘কগনিজেন্স ২১’ র অন্যতম সেগমেন্ট ‘অবৎ-ঙ-ঠধপী’ ক্যাটাগরিতে তারা অর্জন করেছেন দ্বিতীয় স্থান। টিম লিডার নিলয় নাথের সঙ্গে কাজ করেন জাহিদ হাসান, শাহিনুর হাসনাত রাহাত ও আয়াজ আল আবরার। এর মধ্যে জাহিদের বাড়ি বগুড়ায়। বাকি তিনজনের বাড়ি চট্টগ্রামের।
এ প্রতিযোগিতা ২টি রাউন্ডে ভাগ করা হয়। ১ম রাউন্ডে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন রিপোর্ট সাবমিট করতে হয়। এর ভিত্তিতে দেশ-বিদেশের প্রতিযোগীদের থেকে বাছাই করে ২২টি দলকে ২য় রাউন্ডের জন্য নির্বাচন করা হয়। ২য় রাউন্ডে সম্পূর্ণ ডিজাইনের খুঁটিনাটি বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করতে হয় অনলাইনে। ১ম ও ২য় রাউন্ডের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
কুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হেলাল আল নাহিয়ান বলেন, আমাদের ছাত্ররা ড্রোনের নকশা করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। তারা যদি পৃষ্ঠপোষকতা পায় তাহলে এ ড্রোন তৈরি করে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। দুর্গম অঞ্চলে নিরাপদে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছাতে কাজে আসবে এ ড্রোন।
চট্টগ্রামের ছেলে নিলয় নাথ মঙ্গলবার বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটি ছিল মূলত একটি ডিজাইন কনটেস্ট, যেখানে কিছু চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়। আমাদের একটি ড্রোন ডিজাইন করতে দেওয়া হয়েছিল যা মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে পারবে। যেহেতু ড্রোনকে কম সময়ে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে তাই ওজন হতে হবে অনেক কম এবং শক্তিশালী কাঠামোর। এ জন্য ড্রোন ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমরা কার্বন ফাইবার ব্যবহার করি। যেটার ওজন অনেক কম এবং এর তৈরি কাঠামো অনেক শক্তিশালী। তারপর ভ্যাকসিনের তাপমাত্রা ২-৮ ডিগ্রি রাখতে আমাদের ভ্যাকসিন বাঙের মধ্যে রেফ্রিজারেশন সিস্টেম রাখতে হয়। ড্রোনটি নিরাপদে ভ্যাকসিন লোড-আনলোডের জন্য আমরা দুই ধরনের গ্রিপিং সিস্টেম রাখি যেটা ভারবহনকারী ড্রোনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধারণা।
চলমান লকডাউনের কারণে টিমওয়ার্ক কীভাবে করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের জন্য এটি ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিযোগিতার ঠিক ১৫ দিন আগে আমরা কাজ শুরু করি। করোনা পরিস্থিতি ও সবাই একই শহরে না থাকায় অনলাইনে আমাদের কাজ শুরু করতে হয়। হাতে সময় কম থাকার কারণে দিনের বেলায় কাজের পাশাপাশি রাতেও আমরা টানা কাজ করেছি। ১৫ দিন টানা রিসার্চ এবং ক্যালকুলেশনের ওপর ভিত্তি করে আমাদের মডেল দাঁড় করাই। আমাদের ৪ জনের সর্বোচ্চ চেষ্টার ফলে আমাদের তৈরি করা মডেলের প্রতিযোগিতার নির্ধারিত সব বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত থাকে,যা আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে।
‘বর্তমানে সারাবিশ্বের করোনা পরিস্থিতির জন্য এ ধরনের মডেল একটি আশীর্বাদ হতে পারে। এটি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল যেমন- বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের দুর্গম গ্রামাঞ্চলে কোনো প্রকার সংক্রমণের ঝুঁকি ছাড়া অল্প সময়ে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে। সহযোগিতা পেলে এ মডেলটি বাস্তব রূপ দেওয়া সম্ভব হবে। আশা করি আমাদের এ ড্রোন মডেল কোভিড পরিস্থিতিতে কোভিড ভ্যাকসিন দ্রুত এবং দূরদূরান্তে নিরাপদে বহন করতে একটি নতুন ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করবে। ’ যোগ করেন নিলয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২-৩ লাখ টাকা খরচ পড়বে ড্রোনটি তৈরিতে।