১৭ মোড়ে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রদর্শন : সৌন্দর্য বর্ধনে অনন্য উদ্যোগ

| বৃহস্পতিবার , ১ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ধ্রুপদীপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর চট্টগ্রাম থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে অনেক বনাঞ্চল, পাহাড়, নদী, দিঘি, পুকুর ও খেলার মাঠ। চট্টগ্রামের সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। বলা অনাবশ্যক যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যতায় ভরা চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অপূর্ব জেলা। এখানকার পাহাড়, সমুদ্র, সমতল ও স্বচ্ছ নদ নদীর সমম্বিত সৌন্দর্য যে কাউকে সহজে মুগ্ধ করে। কেবল সৌন্দর্যে নয়, প্রাচুর্য্যেও চট্টগ্রামকে ভরপুর করে দিয়েছে প্রকৃতি। এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা কর্ণফুলী তার, স্নিগ্ধতা, চঞ্চলতা ও মাধুর্যের কারণে তো বটেই, বরং তারও চেয়ে অধিক গুরুত্ব বহন করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে নগরের ১৭ মোড়ে সৌন্দর্য বর্ধনে উদ্যোগী হয়েছেন, যা অভিনন্দনযোগ্য। দৈনিক আজাদীর ৩০ জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত ‘নগরের ১৭ মোড়ে হবে গোলচত্বর ডিজাইনে প্রাধান্য ইতিহাসঐতিহ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একপাশে জাহাজের স্টিয়ারিং। অপরপাশে চাকা। মাঝখানে পাকা অবকাঠামো। এই তিনের সমন্বয়ে তৈরি করা নান্দনিক ডিজাইনে নগরের সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ে একটি গোল চত্বর করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখে চট্টগ্রাম। বন্দর এবং এখানকার নানা শিল্পকারখানা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। বন্দরের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাহাজ। তারই প্রতীক হিসেবে এসেছে জাহাজের স্টিয়ারিং। একইভাবে চাকা শিল্পকারখানার প্রতীক। অবকাঠামোটি অর্থনৈতিক কেনন্দ্র শুধু সিমেন্ট ক্রসিং মোড় নয়। নগরের ১৭টি মোড়ে গোলচত্বর করবে চসিক। এসব গোলচত্বরের ডিজাইনে প্রাধান্য পাচ্ছে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। বিশেষ করে যে এলাকায় গোলচত্বরটি নির্মাণ করা হবে ওই এলাকার ইতিহাসকে গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে ডিজাইন। যেমন সিমেন্ট ক্রসিং মোড় দুটি ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল)-এর মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় এখানে অর্থনৈতিক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আড়াই হাজার কোটি টাকার ‘এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ের গোলচত্বরটি করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৯টি গোলচত্বর করা হবে। এসব গোলচত্বর নির্মাণে বরাদ্দ আছে ১২ কোটি টাকা। গোলচত্বরগুলোর অবকাঠামো নির্মাণে পৌনে চার কোটি টাকায় ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ায় ৬টির কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলোর জন্য নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। একইসঙ্গে প্রকল্পবহির্ভূত গোলচত্বরগুলোর জন্যও নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। গোলচত্বরগুলো সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নের পাশাপাশি সৌন্দর্য বাড়াবে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, চকবাজার, লালদীঘি, কোতোয়ালী জিপিও’র সামনে, নয়াবাজার, সিমেন্ট ক্রসিং এবং কাঠগড় মোড়ে কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে সিজিকেএস স্কুল, সাগরিকা, কাজীর দেউড়ি, নতুন ব্রিজ সংলগ্ন মোড় এবং নিউমার্কেট মোড়ে গোলচত্বর নির্মাণে ডিডিসি নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান নকশা প্রণয়ন করছে। এছাড়া বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেটসহ আরো কয়েকটি স্থানেও গোলচত্বর নির্মাণ করা হবে পর্যায়ক্রমে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, চট্টগ্রামের জন্য ১৯৬১ সালে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছিল। একই সময়ে চেন্নাইয়ের জন্য একই মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল। তারা এটি বাস্তবায়ন করে কোন পর্যায়ে আছে, আর চট্টগ্রাম কোন পর্যায়ে আছে সেটা অনুমান করা যায় সহজে। এরপরও আরও কয়েকটি চমৎকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল। চট্টগ্রামে প্রতিদিন নগরে ১০ লাখ ভাসমান মানুষ আসে। তারা নগরের টানে কেউ আসে না। গ্রাম থেকে তাড়িত হয়ে আসছে। যে হারে মানুষ নগরমুখী হচ্ছে সে অনুযায়ী তাদের জায়গা দেওয়ার মতো সুযোগ নগরে নেই। তাদের থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা নেই। কোনো পরিকল্পনা করতে হলে আগে কী পরিমাণ জনসংখ্যা আছে তা শুমারি করে নিশ্চিত হতে হবে। তাঁরা বলেন, শিল্পায়ন ছাড়া কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না। পরিকল্পনায় শিল্পকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্পায়নকে ঘিরেই নগরায়ণ। শিল্পের জন্য মানুষ আসবে। আর এ মানুষকে ঘিরেই গড়ে উঠবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য বিষয়। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চল দেশের অর্থনীতিতে যেভাবে অবদান রাখছে সে অনুপাতে চট্টগ্রামবাসীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি মূল্যায়িত হওয়া দরকার ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি। চট্টগ্রামের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেটিও অক্ষুণ্ন রাখা যায় নি। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলে থাকি। এটি বলার খাতিরে না বলে বাস্তব প্রয়োগ দেখতে চাই।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, চট্টগ্রামে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে মানুষের জীবনযাত্রার মানে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব প্রকল্প শেষ করার জন্য প্রয়োজন চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসা। লোক দেখানো উন্নয়ন যেমন কোনো কাজে আসে না, তেমনি আন্তরিকতাহীন কাজও যেন শেষ হয় না। চট্টগ্রামের সৌন্দর্য বর্ধনে সিটি করপোরেশন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তার দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে