১৭ টাকার দ্বন্দ্বের জেরে সাতকানিয়ায় কিশোরের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৮ মে, ২০২৪ at ৯:৫২ অপরাহ্ণ

চায়ের দোকানে ১৭ টাকা বকেয়া বিলের দ্বন্দ্বের জেরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুনের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে আরেক ভাই আশংকাজনক আবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে নিহতের ভাইয়ের দাবী রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নাম্বার ওয়ার্ড মিঠার দোকান এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

ছুরিকাঘাতে নিহতের নাম মাহামুদুল হক (৩৩)। তিনি উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আজিমপুর এলাকার বদিউল আলমের ছেলে। এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন নিহতের বড় ভাই জিয়াবুল হক (৩৫)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহতের বড় ভাই ছদাহা ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার ভাই এলাকায় একটি মাছের খাদ্যের কারখানায় সহকারী হিসাবে কাজ করতো। ২৬ মে (রবিবার) কারখানার পাশে ফেরদৌসের চায়ের দোকানে ১৭ টাকার নাস্তা করে একটু পরে টাকা দিতে চাইলে বকেয়া টাকার জন্য ফেরদৌসের ছেলে কিশোর গ্যাং সদস্য রায়হান (২৩) এর সাথে বাড়াবাড়ি হয়।

এক পর্যায়ে মাহমুদুল হক অন্য একজনের কাছ থেকে নিয়ে সেই টাকা পরিশোধ করে দেন।

পরদিন সোমবার রায়হান লোকদের কাছে বলাবলি করেন সে মাহমুদুল হকের কাছে আরো টাকা পাবে। এ বিষয়টি মাহমুদুল হকের কানে গেলে সে টাকা পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে রায়হান কাছে জানতে চান।

রায়হান কোন সদুত্তর দিতে না পারলে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রায়হান মাহমুদুল হককে লোহার রড নিয়ে মারতে তেড়ে আসেন। এসময় তাদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলেও ঘটনাটি স্থানীয়দের মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়।

কিন্তু ঘটনার ক্ষোভ ধরে রায়হান তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সোহাগ, সাইফুল, তাসিফ সহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে আমার ভাই ও বাবার সাথে হাতাহাতি করেন এবং এক পর্যায়ে আমার বাবার গায়ে হাত দেন। এটি প্রাথমিকভাবে সমাধান হলেও তারা আমাদের উদ্দেশ্যে মনে ক্ষোভ রেখে দেন।

নিহতের ভাই এনামুল হক আরো বলেন, মূলত আমি এবং মাহমুদুল হক গত নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। আমরা আমাদের কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট ছিলাম। অপরদিকে হামলাকারীরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপির পক্ষে কাজ করেছে। মূলত তখন থেকেই তারা আমাদেরকে টার্গেটে রেখেছে। তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল কখন তারা আমাদেরকে আক্রমণ করবে।

অন্যথায় ১৭ টাকার জন্য খুনের ঘটনা কখনো যুক্তিযুক্ত নয়। মূলত আজকের ঘটনাটি তারা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। আমার ভাই মাহমুদুল হক নৌকা প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট ছিল তখন থেকে হত্যাকারিরা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নিহতের ভাই এনামুল হক এর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব এমপি ও তাঁর ব্যাক্তিগত সহকারী আবু তৈয়ব এর মোবাইলে কল দিলেও ফোন না ধরায় তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার দৈনিক আজাদীকে বলেন, মাত্র ১৭ টাকা পাওনার বিষয় নিয়ে গত সোমবার বিকেলে চায়ের দোকানির ছেলের সঙ্গে নিহত যুবক মাহমুদুল হকের হাতাহাতি হয়েছিল। এর জের ধরে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত মাহামুদুল হক চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন৷

নিহতের ভাইয়ের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু বলেনি। তবে ঘটনা যাই হোক, তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে এবং অপরাধীরা ছাড় পাবেনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশপথ নিলেন কক্সবাজার সদর, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিতরা
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে মহিষ চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু