২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। নেমেই বাজিমাত। সেদিন ক্যারিবীয়দের হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল টাইগাররা। এরপর একে একে কেটে গেছে ১৫ বছর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে একটি জয় হন্য হয়ে খুঁজছিল টাইগাররা। কিন্তু ধরা দেয়নি সে আরাধ্য জয়। অবশেষে এলো স্বস্তির সেই জয়। সাদামাটা ব্যাটিংয়ের পর পেস বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং, বাংলাদেশ পেয়েছে জয়। যা দারুণ স্বস্তি এনে দিয়েছে টাইগার শিবিরে। কারণ এমন একটি জয় যে বড় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশ দলের।
অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ড। যাদের বিপক্ষে আগের তিন দেখায় দুটি জয় ছিল টাইগারদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের এক দেখায় জয়টাও টাইগারদের। তারপরও প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দলটি কম ভয়ংকর নয়। তবে সকল জল্পনা, কল্পনা আর শংকাকে উড়িয়ে দিয়ে দারুণ স্বস্তির এক জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল টাইগার শিবির। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ডাচদের হারিয়েছে সাকিবের দল ৯ রানে। এই জয়ে শুধু যে একটি জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল তা কিন্তু নয়। এই জয় বাড়িয়ে দিয়েছে টাইগার শিবিরের আত্মবিশ্বাসও। এখন সে আত্নবিশ্বসাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ পরের ম্যাচ গুলোতে। যদিও এই ম্যাচে খুব ভাল ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। ডাচদের বোলিং তেমন ধারালো না হলেও ২০ ওভারে ১৪৪ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বোলিংয়ে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন তাসকিন-হাসান মাহমুদরা।
প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা ভাল করেছিল। সৌম্য ও শান্তকে দিয়ে ইনিংসের সূচনা করে উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৩ রান। ৩০ ম্যাচ পর উদ্বোধনী জুটিতে রান ছাড়াল ৪০। দুই ওপেনার শুরুটা ভাল করলেও বড় করতে পারেনি নিজেদের ইনিংসকে। ৪৩ রানের মাথায় সৌম্য বিদায় নেন ১৪ বলে ১৪ রান করে। পরের ওভারে ফিরেন শান্ত ২০ বলে ২৫ রান করে। এরপর উইকেটে দুই সেরা তারকা সাকিব ও লিটন। কিন্তু পারলেন না দলকে টেনে নিতে। পরপর দুই ওভারে ফিরলেন দুজন। যেখানে লিটন ফিরেছেন ১১ বলে ৯ রান করে আর সাকিব ফিরেছেন ৯ বলে ৭ রান করে। ৪ ওভারে ২০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে তখন বাংলাদেশ। এমন অবস্থায়ও ব্যাট হাতে ভূমিকা রাখতে পারলেন না ইয়াসির আলি রাব্বি। চাপের সময় আরো একবার ভেঙ্গে পড়লেন এই ব্যাটার। তবে লড়াইটা করে গেছেন আফিফ একজনই। তাকে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছেন সোহান ও মোসাদ্দেক। আফিফের সাথে ৪৪ রানের জুটি গড়ে এই উইকেট রক্ষক ফিরেন ১৮ বলে ১৩ রান করে। ২৮ রানের মাথায় জীবন পেয়েও নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারলেন না আফিফ। ফিরেছেন ২৭ বলে ৩৮ রান করে। তারপরও তিনি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরার। শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেনের ১২ বলে ২০ রানের সুবাধে ১৪৪ রান জড়ো করে বাংলাদেশ।
১৪৫ রানের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য নিয়ে নেদারল্যান্ডসকে থামাতে পারবে কিনা তেমনটি হেসব নিকেষ করতে শুরু করেছিলেন অনেকেই। আর তখনই ইনিংসের প্রথম বলে তাসকিনের আঘাত। স্লিপে দারুণ এক ক্যাচ নিলেন ইয়াসির। ফিরলেন বিক্রমজিত সিং। পরের বলে বাস ডে লেডেকে ফেরান তাসকিন উইকেটের পেছনে সোহানের ক্যাচে পরিণত করে। সাকিবের প্রথম ওভারেই দারুণ এক ছক্কা মারেন ডাচদের সবচাইতে ভয়ংকর ব্যাটার মাঙ ও’ডাউড। তবে পরের বলে রান আউট হয়ে যান তিনি। আর এক বল পর আরেক বড় ভরসা টম কুপারও রান আউট হয়ে ফিরে গেলে ডাচদের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৫ রান। কিন্তু থামানো যাচ্ছিল না আকারম্যানকে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দেড়শর বেশি ম্যাচ খেলে ২০টি সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান চেষ্টা করেন একটু একটু করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে টেনে নিয়ে যান তিনি। অপরদিকে তাসকিন যেন অগ্নিমুর্তি ধারন করেছিলেন। প্রথম স্পেলে দুই উইকেট নেওয়া তাসকিন দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এক ওভারে নেন দুই উইকেট। ৪৮ বলে ৬২ রান করা আকারম্যানকে ফিরিয়ে তিনি পূর্ণ করেন চার উইকেট। ৪১ ম্যাচের ক্যারিয়ারে আগে কখনোই ইনিংসে দুই উইকেটের বেশি নিতে পারেননি তাসকিন। এবার ৫ উইকেটের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন। নিজের শেষ বলে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারও দিয়েছিলেন। কিন্তু পল ফন মেকেরেনের ব্যাটের কানায় লেগে তা চলে যায় বাউন্ডারিতে। ফলে পাঁচ উইকেট পাওয়া হয়নি তাসকিনের। তারপরও ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন এই পেসার। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে পল ভি ম্যাকেরিনকে ফিরিয়ে নেদারল্যন্ডসকে ১৩৫ রানে থামিয়ে দেন সৌম্য সরকার। তবে ম্যাকেরিন ঝড় তুলে আসেন ১৪ বলে ২৪ রান করে। কিন্তু বাংলাদেশকে জয় বঞ্চিত করতে পারেনি। তাসকিন ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। হাসান মাহমুদ নিয়েছেন দুই উইকেট।