১৫ দিনের ব্যবধানে শঙ্খে আবারও দুর্বৃত্তের বিষ

মরে ভেসে উঠল কয়েক প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণি

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | রবিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশসাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শঙ্খ নদীতে ঘটছে উপর্যুপরি বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের ঘটনা। ১৫ দিনের ব্যবধানে আবারও বিষ প্রয়োগ করলো দুর্বৃত্তের দল। গত শুক্রবার গভীর রাতে শঙ্খনদীর দোহাজারী পয়েন্টে বিষ প্রয়োগ করা হয়। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি শঙ্খ নদীর বান্দরবান ও চন্দনাইশ সীমান্তের রেইচা এলাকা এবং দোহাজারী দিয়াকুল অংশে বিষ প্রয়োগ করে দুর্বৃত্তরা।

জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত শঙ্খনদীর দোহাজারী ও কালিয়াইশ অংশে বিষ প্রয়োগ করে। বিষের প্রভাবে দেখা দেয় মাছের মড়ক। গতকাল শনিবার ভোর থেকে নদীর পানিতে চিংড়ি, চিরিং ও বাইলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে যেতে দেখে ভোর থেকেই স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষ মাছ ধরতে নদীতে নেমে পড়ে। এ সময় প্রত্যেকেই আধা কেজি থেকে দুই কেজি পর্যন্ত মাছ পেয়েছেন। এমনকি কেউ কেউ ৫/৬ কেজি পর্যন্ত মাছ পেয়েছেন। এরমধ্যে অধিকাংশই বড়ছোট চিংড়ি।

নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত রাতের অন্ধকারে নদীতে বিষ প্রয়োগ করে। বিষের প্রভাবে নদীর চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠলে দুর্বৃত্তরা মরা মাছ ধরে ভোরের আলো ফুটতেই পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভোর হলে মরা মাছ ভেসে যেতে দেখলে তা ধরতে নদীতে নেমে পড়ে শতশত মানুষ। এই শুকনো মৌসুমে শঙ্খ নদীতে বার বার বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটলেও বরাবরের মতোই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বিষ প্রয়োগকারী দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়রা জানায়, শঙ্খনদীর দোহাজারী ও কালিয়াইশ অংশে ভাড়ায় বসবাসকারী কয়েকজন রোহিঙ্গা শঙ্খনদীতে বিষ প্রয়োগ করছে বলে তাদের ধারণা। তারা রাতেই চাহিদা মতো মাছ আহরণ করে ভোরের আলো ফুটতেই মাছ নিয়ে চলে যায়। এ ব্যাপারে তদন্ত করলে বিষ প্রয়োগকারীরা সহজেই শনাক্ত হবে বলে তারা জানান।

এদিকে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কিংবা নদীতে বিষ প্রয়োগে নিরুৎসাহিত করতে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে শঙ্খ নদীর বাস্তুতন্ত্র।

দুর্বৃত্তের দল প্রতিনিয়ত শঙ্খ নদীর ধোপাছড়ি থেকে দোহাজারী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে বিষ প্রয়োগ করার ফলে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছের প্রজনন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে এসব দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান শঙ্খনদীর তীরে বসবাসকারী ও জেলেরা।

জানা যায়, বিগত কয়েক বছর আগেও শঙ্খ নদীতে চিংড়ি, চিরিং, বাইলা, পাবদা, বোয়াল, রুই, কাতাল ও কাকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। হাজার হাজার জেলে পরিবার শঙ্খ নদীতে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বিগত কয়েক বছর ধরে উপর্যুপরি বিষ প্রয়োগের ফলে প্রায় মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে মিঠা পানির নদীটি। পশ্চিম কাটগড় জলদাশ পাড়ার বলরাম জলদাস (৪০) জানান, মাত্র কয়েক বছর আগেও নদীতে জাল ফেললে কয়েক কেজি মাছ পাওয়া যেতো। বর্তমানে উপর্যুপরি বিষ প্রয়োগের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিধন হচ্ছে। ফলে সারাদিন জাল ফেলেও অনেক সময় আধা কেজি মাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে অনেক জেলে পরিবার অন্য পেশায় চলে গেছে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) স্বপন চন্দ্র দে জানান, নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নদীতে বিষ প্রয়োগের খবর পেলেও কারা বিষ প্রয়োগ করছে তাদের কেউ সঠিক তথ্য দিতে না পারায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তিনি নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে নদীতে বিষ প্রয়োগকারীদের ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কারা বিষ প্রয়োগ করছে তথ্য দিতে পারলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রেতা-দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া, আজ সমাপনী
পরবর্তী নিবন্ধপাসপোর্ট সূচকে চার ধাপ অগ্রগতি বাংলাদেশের