১৫ তলা ক্যান্সার ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নতুন ১৫ তলা ক্যান্সার ভবনের নির্মাণ কাজ অবশেষে শুরু হচ্ছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিত্তিপ্রস্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে এ ভবনের। আগের নির্ধারিত স্থানেই (বর্তমান ক্যান্সার ওয়ার্ডের পাশে ক্যান্টিন সংলগ্ন খালি জায়গা) ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, রোববার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নতুন ক্যান্সার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমরা ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে যুক্ত হব।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরসহ প্রশাসন, পুলিশ, গণপূর্ত ও স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামসহ ৮টি বিভাগীয় শহরের (ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও খুলনা) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একশ শয্যার একটি করে ক্যান্সার ইউনিট স্থাপনে এ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৯ সালে। ডিপিপি অনুযায়ী একশ শয্যার ক্যান্সার ইউনিট স্থাপনের জন্য ২টি বেইজমেন্টসহ (বাংকার) ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি করে ভবন নির্মাণের সংস্থান রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
তবে নতুন এ ভবনে ক্যান্সার ইউনিটের পাশাপাশি কিডনি ও হৃদরোগ বিভাগেরও ঠাঁই হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে ভিন্ন একটি প্রকল্পের অধীনে নতুন করে ৫০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের কথা রয়েছে চমেক হাসপাতালে। এই ডায়ালাইসিস সেন্টারটিও নতুন ক্যান্সার ভবনে স্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। নতুন ভবনের অন্তত দুটি ফ্লোর কিডনি বিভাগ ও ডায়ালাইসিস সেন্টারের জন্য বরাদ্দ থাকছে। এছাড়া সিসিইউসহ হৃদরোগ বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকছে আরো দুটি ফ্লোর। সব মিলিয়ে ৮টি ফ্লোর বরাদ্দ পাচ্ছে ক্যান্সার ইউনিট। ১৫ তলা এ ভবনে প্রাথমিকভাবে মোট ৪৬০ শয্যা সংস্থানের কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের প্রধান ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফ। এর মধ্যে ক্যান্সার ইউনিটের পাশাপাশি কিডনি ও হৃদরোগ বিভাগকে নির্ধারিত সংখ্যায় শয্যা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। কিডনি ডায়ালাইসিসে সরকারি পর্যায়ে নতুন করে ৫০ শয্যার যে ডায়ালাইসিস সেন্টার হওয়ার কথা, সেটি নতুন ক্যান্সার ভবনেই স্থাপন হবে মর্মে জানতে পেরেছেন বলে জানান চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা।
এদিকে, নির্মাণ কাজ শুরু করতে এরই মধ্যে নির্ধারিত স্থানে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরপরই এই ভবনের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বিশেষায়িত এ ক্যান্সার ইউনিট নির্মাণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক অনুমোদনের পরই এই অবকাঠামো নির্মাণে জায়গা চিহ্নিত করে জানাতে গণপূর্ত বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয় চমেক হাসপাতাল প্রশাসনকে। চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহানের স্বাক্ষরে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এ চিঠি দেয়া হয়। গণপূর্ত বিভাগের চিঠির প্রেক্ষিতে ক্যান্সার ইউনিটের নতুন ভবন নির্মাণে বর্তমান ক্যান্সার ওয়ার্ডের পাশে (ক্যান্টিন সংলগ্ন) খালি জায়গাটি নির্ধারণ করে হাসপাতাল প্রশাসন। জায়গাটি নির্ধারণ করে গণপূর্ত বিভাগ এবং স্থাপত্য অধিদফতরে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত ওই জায়গাতেই ভবনটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় বলে নিশ্চিত করেন চমেক হাসপাতালের বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। আর প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন, স্থান চূড়ান্ত ও ডিজিটাল সার্ভের পর ভবনের নকশা প্রণয়নের কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ। তিনি বলেন, স্থাপত্য অধিদপ্তর নকশা প্রণয়ন করেছে। একই নকশায় ৮টি বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন এ ভবন গড়ে তোলা হবে।
সংশ্ল্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের অর্থায়নেই গড়ে তোলা হচ্ছে বিশেষায়িত এ ক্যান্সার ইউনিট। এর আগে বিশেষায়িত ইউনিটটি নির্মাণের লক্ষ্যে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে ২০১৮ সালে চমেক হাসপাতালকে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে বিস্তারিত প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বিশেষায়িত এই ক্যান্সার ইউনিটে থাকবে ওয়ান স্টপ সার্ভিস, অপারেশন থিয়েটার ও আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) সুবিধা। ক্যান্সারের চিকিৎসায় অপরিহার্য রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন ছাড়াও থাকবে সর্বাধুনিক লিনিয়ার এঙিলেটর মেশিনও। এর বাইরে থেরাপি গ্রহণে অক্ষম রোগীদের জন্য থাকবে প্যালেটিভ কেয়ার (ব্যথা নিরাময়ে)।
বিশেষায়িত এই ক্যান্সার ইউনিটে শিশু ক্যান্সার রোগীদের জন্য অন্তত ৫টি শয্যা রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। ইউনিটে অন্তত ৬০-৭০ জন চিকিৎসকের পদ সৃষ্টির কথাও বলা হয়েছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ক্যান্সারের চিকিৎসক ছাড়াও ইউনিটে অন্তত তিনজন অ্যানেসথেসিস্ট, ক্যান্সার সার্জন ও মেডিসিনের চিকিৎসক রাখারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন রোগী আসলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে তার রোগ নির্ণয়পূর্বক প্রয়োজনীয় থেরাপি ও চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। যেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসক ছাড়াও মেডিসিন, ক্যান্সার সার্জন ও অ্যানেসথেসিস্ট থাকবেন বলে জানিয়েছেন ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফ ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী আসগর চৌধুরী।
তারা বলেন, ইউনিটে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সর্বাধুনিক মেশিন লিনিয়ার এঙিলেটরও থাকবে। প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা মূল্যের অন্তত তিনটি লিনিয়ার এঙিলেটর রাখার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বিশেষায়িত ক্যান্সার ইউনিটটি স্থাপনের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামে ক্যান্সারের চিকিৎসায় অসাধারণ অগ্রগতি হবে বলে মনে করেন তারা। যার মাধ্যমে চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক ক্যান্সার রোগী স্বল্প খরচে বিশেষায়িত ক্যান্সার চিকিৎসার সুবিধা পাবেন বলেও জানান তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার সিএনজি এলএনজি দিয়ে চলবে ট্রেন
পরবর্তী নিবন্ধটেক্সি থেকে নামতেই দ্রুতগতির মোটর সাইকেলের ধাক্কা