নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন বিভিন্ন পশু বাজারসহ হাটবাজার এবং ঘাটের ইজারার প্রায় ১২ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়ে গেছে। প্রচলিত নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের সাথে যোগসাজসে এই টাকা না নিয়েই বাজারের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডার সম্পন্ন হওয়ার সাত কর্ম দিবসের মধ্যে সমুদয় টাকা বুঝে নিয়ে বাজারের দখল দেয়ার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে জমজমাট ব্যবসা পার হয়ে গেলে এই টাকা প্রাপ্তি নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। বিগত বছরের বিপুল পরিমাণ অর্থও এখনো অনাদায়ী পড়ে আছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন সাগরিকা গরুর বাজার, বিবির হাট গরুর বাজার এবং পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ও ঘাট রয়েছে। যেগুলো প্রতি বছরের পহেলা বৈশাখ থেকে পরবর্তী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত সময়কালের জন্য ইজারাদার নিয়োগ করা হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বাজারগুলোর ইজারার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। চলতি বছরও গত মার্চে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত পহেলা এপ্রিল থেকে বাজারগুলো ইজারাদারের হাতে বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাসহ সিটি কর্পোরেশনের প্রচলিত বিধান মোতাবেক মার্চে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ডিমান্ড লেটার ইস্যু করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে টেন্ডারে উদ্বৃত সমুদয় টাকা বুঝে নেয়ার কথা। কিন্তু তা না করে আংশিক টাকা নিয়ে বাজারগুলো ইজারাদারদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
চলতি বছর সাগরিকা গরু বাজারের টেন্ডার হয়েছে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এই বাজারের বিপরীতে ইজারাদার ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা দিয়েছে। বিবিরহাট গরু বাজারের ইজারা মূল্য ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অথচ ইজারাদার জমা দিয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারের ইজারা মূল্য ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। অথচ ইজারাদার জমা দিয়েছে মাত্র ৪১ লাখ টাকা। অন্যান্য বাজার ও ঘাট সমূহের অবস্থাও একই। কোনো বাজারের অর্ধেক টাকাও সিটি কর্পোরেশন বুঝে পায়নি। অথচ বাজারগুলোতে ইজারাদার ব্যবসা করছে। বিভিন্ন বাজার এবং ঘাটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১২ কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে।
আটকা পড়া এই টাকা আদায়ে অনিশ্চয়তার শংকা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ইজারাদারেরা এই টাকা কখন প্রদান করবে বা আদৌ পরিশোধ করবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গতবছরও এভাবে ইজারা দেয়া হয়েছিল। গতবছরের সাগরিকা গরু বাজারের ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, বিবিরহাট গরু বাজারের ১ কোটি ৪ লাখ টাকা, পোস্তারপাড় ছাগল বাজারের ৬৭ লাখ টাকা, অন্যান্য কাঁচাবাজার এবং ঘাটে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনাদায়ী পড়ে আছে। উপরোক্ত ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে নোটিশ প্রদান করেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনের এই নোটিশে সংশ্লিষ্ট খেলাপি ইজারাদারেরা কোন সাড়া দেয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বাজারগুলোর মধ্যে সাগরিকা গরু বাজার, বিবিরহাট গরুর বাজার এবং পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারের ইজারা মূল্য সব থেকে বেশি। এই তিনটি বাজারের মূল ব্যবসা হয় কোরবানির মৌসুমে। কোরবানির মৌসুম চলে গেলে বাজার তিনটি ঝিমিয়ে পড়ে। কোরবানির মৌসুমে ব্যবসা করার পর ইজারাদারদের কাছ থেকে আর টাকা আদায় করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এবারও গতবারের মতো টাকা অনাদায়ী হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গুটিকয়েক কর্মকর্তা কর্মচারীকে পুরো ব্যাপারটির জন্য দায়ী করে বলা হয়েছে তাদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকা পরিশোধ না করেই ব্যবসা করছেন ইজারাদাররা। এতে সিটি কর্পোরেশন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইজারাদাররা লাভবান হচ্ছেন। এই অর্থ ব্যাংকে রেখে দিলেও প্রতি মাসে বড় অংকের মুনাফা আসে বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্টেট অফিসার কামরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আংশিক আদায় হয়েছে, কিছু বাকি আছে। যাদের বাকি আছে তাদের আমরা নোটিশ দিচ্ছি। তিনি বলেন, ১৪২৭ বাংলার টাকাও অনেকের কাছে বকেয়া আছে। যারা দেয়নি তাদের আমরা এবার টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করতে দিই নাই। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্ততি চলছে।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, নিয়ম হচ্ছে, পুরোটা একসাথে পরিশোধ করা করা। কিন্তু করোনার অজুহাতে কিস্তি করে দিচ্ছেন। আমরা করোনার কারনেই কিস্তির বিষয়টি মেনে নিয়েছি। তবে সমুদয় টাকা আদায় করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।