১০ হাজার কন্টেনার নিয়ে বেকায়দায় চট্টগ্রাম বন্দর

অনেক কন্টেনারের পণ্য নষ্ট, কিছু জনস্বাস্থ্যসহ বন্দরের জন্য হুমকি।। নানা জটিলতায় সংকটের সুরাহা হচ্ছে না, ক্রাশ প্রোগ্রামে জোর

হাসান আকবর | রবিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ইয়ার্ড দখল করে থাকা ১০ হাজারের বেশি কন্টেনার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব কন্টেনার সরিয়ে নেয়ার তাগাদা দেয়া হলেও নানা জটিলতায় সংকটের সুরাহা হচ্ছে না। সময়মতো খালাস না করায় ইতোমধ্যে শত শত কন্টেনারের নানা পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। মেয়াদ হারিয়েছে আমদানি করা অনেক পণ্য। নানা জটিলতায় কন্টেনারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইয়ার্ড দখল করে থাকলেও এসব কন্টেনারের বেশিরভাগে থাকা পণ্যের কোনো বাজারমূল্য নেই। অনেক কন্টেনারের পণ্য জনস্বাস্থ্যসহ বন্দরের জন্য হুমকি হয়ে রয়েছে। বিশেষ একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে এসব কন্টেনারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে আমদানিকৃত বহু পণ্য আমদানিকারকরা খালাস করেন না। নানা গোঁজামিল ধরা পড়ার পর বহু আমদানিকারক গা ঢাকা দেন। অনেক সময় আমদানিকৃত পণ্যের বাজারদর কমে গেলে সটকে পড়েন অনেকে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা পণ্যের চালান ধরা পড়লেও খালাসে জটিলতা তৈরি হয়। আরো নানা আইনি জটিলতায় বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য বোঝাই অনেক কন্টেনার আটকা পড়ে রয়েছে। মামলাসহ নানা জটিলতায় কন্টেনারগুলো সময়মতো খালাস হয়নি কিংবা খালাস করেনি। বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ইয়ার্ড দখল করে পড়ে থাকা এই ধরনের পণ্য বোঝাই কন্টেনারের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে অনেক কন্টেনার মামলার কারণে আটকা পড়ে রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ইয়ার্ডে ৫৯ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রাখার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে বন্দরে প্রায়শ কন্টেনারের পরিমাণ ৪৫ হাজার টিইইউএসে গিয়ে ঠেকে। ৪৫ হাজার টিইইউএসের মধ্যে ১০ হাজার বছরের পর বছর ধরে ইয়ার্ড দখল করে থাকা কন্টেনার। এসব কন্টেনারের পণ্যের বাজারমূল্য যেমন তলানিতে তেমনি অনেকগুলো কেমিক্যাল বোঝাই কন্টেনার নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ইয়ার্ডে কন্টেনার কম হলে ইকুইপমেন্ট মুভমেন্টসহ কাজে সুবিধা হয়। এতে বন্দরের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। বাড়তি কন্টেনার বন্দরের কাজের গতি ঠেকিয়ে দেয়। বন্দরের বছরের পর বছর আটকে থাকা ১০ হাজারের বেশি কন্টেনার কাজেকর্মে সংকট তৈরি করে আসছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কাস্টমসকে দফায় দফায় চিঠি দিলেও কার্যত কিছু হয়নি। হাতে গোনা কয়েক কন্টেনার পণ্য সরিয়ে এবং মাটিতে পুঁতে ফেলা হলেও বেশিরভাগ কন্টেনার ইয়ার্ড দখল করে রয়েছে।

কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাইলেই একটি কন্টেনার ধ্বংস করতে পারি না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন নিতে হয়। সমন্বয় করতে হয় পরিবেশ, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে। এছাড়া কোনো চালানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা থাকলেও কাস্টমস বা এনবিআর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নানা প্রতিকূলতায় সৃষ্ট দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমদানিকৃত নিলামযোগ্য বহু পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। পচনশীল নানা পণ্য পচে বন্দরের অভ্যন্তরে দুর্গন্ধ ছড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটে। মামলার কারণেও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমদানিকারকদের জটিলতা, প্রশাসনিক জট ও চলমান মামলার কারণে এসব পণ্য খালাস করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে শিপিং লাইনগুলো কন্টেনার ফেরত পাচ্ছে না, আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন এবং সরকারের রাজস্ব আদায়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত মে মাসে বিশেষ আদেশ জারি করে। উক্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দশ বছরে আটকা পড়া কন্টেনারগুলো দ্রুত নিলাম বা ধ্বংস করতে হবে। প্রথম নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। দুই দফা নিলামেও বিক্রি না হলে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সর্বোচ্চ প্রস্তাবে বিক্রি করার নির্দেশনা রয়েছে। আর ব্যবহার অযোগ্য বা নিষিদ্ধ পণ্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে হস্তান্তরের সুযোগও রাখা হয়েছে।

এ নির্দেশনার পর চট্টগ্রাম কাস্টমস কিছু কন্টেনার নিলাম করেছে উল্লেখ করে কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা জানান, এভাবে দুচারশ কন্টেনার নিলাম করে কিছুই হবে না। ইয়ার্ডে বছরের পর বছর আটকে থাকা কন্টেনারগুলোর ব্যাপারে সরকারকে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। এখন দলীয় সরকার নেই। এ সুযোগে আটকে পড়া কন্টেনারগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্ত্রাস মাদকমুক্ত আধুনিক সন্দ্বীপ গড়বো : মোস্তফা কামাল পাশা
পরবর্তী নিবন্ধবিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইয়ং ওয়ান গ্রুপের কারখানা পরিদর্শন