১০ দিন ধরে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, স্থবির টেকনাফ স্থলবন্দর

মিয়ানমারে সংঘর্ষ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারবাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু পুরনো ও জমজমাট। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রভাব পড়েছে দুই দেশের এই বাণিজ্যে। জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ প্রকট আকার ধারণ করায় বর্তমানে আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে চরম প্রভাব পড়েছে। এতে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিস্থিতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে, বন্ধ রয়েছে আমদানিরপ্তানি বাণিজ্য।

সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, রাখাইনের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে আমদানিরপ্তানি থমকে গেছে। এতে সীমান্ত এলাকার অন্যান্য ব্যবসাবাণিজ্যেও ভাটা পড়েছে। গত ১০ দিন ধরে মিয়ানমার থেকে কোনও পণ্যবাহী ট্রলার আসেনি। মূলত জলপথে ‘আরাকান আর্মির প্রতিবন্ধকতায়’ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী ট্রলার আসছে না বলে দাবি তাদের। আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে এই কঠিন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত শনিবার টেকনাফ স্থলবন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এইচ এম শফিকুজ্জামান।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল। গত ৮ ডিসেম্বর নাফ নদের ওপারে মংডু শহর দখলে নেয় আরাকান আর্মি। মূলত তাদের প্রতিবন্ধকতার কারণেই এরপর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে রাখাইনের রাজধানী সিত্তে (পূর্বনাম আকিয়াব) থেকে কোনও পণ্যেবাহী ট্রলার আসেনি। এ ব্যাপারে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘মালামালের আমদানির জন্য আমাদের অগ্রিম টাকা সে দেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধের কারণে মালামাল আসছে না। এতে আমার মতো অনেক ব্যবসায়ীর লোকসানে পড়েছেন।’ তিনি বলেন, রাখাইনে যুদ্ধের কারণে অনেক দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ আছে। অন্যদিকে অনেক লোকজন কর্মহীন দিন কাটাচ্ছে। স্থলবন্দরের কাস্টমসের তথ্য মতে, আমদানিরপ্তানি বন্ধ থাকায় স্থলবন্দরে রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়েছে। যেখানে আগে টেকনাফ বন্দরে মাসে অন্তত ২০০ ইঞ্জিনচালিত বড় বোটে পণ্য আনানেওয়া হতো; তা এখন শূন্য কোটায় বলা চলে। এতে গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে টেকনাফ বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। তাই স্বাভাবিক সময়ে ৪০৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও সেখানে ডিসেম্বরে আদায় হয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা। রাখাইনে যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের তুলনায় ১৭০ কোটি টাকার কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা এম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি দখলের পরে মূলত এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসেনি। কারণ আরাকান আর্মিরা বাধা দিচ্ছে। সেজন্য পণ্য জাহাজ আসতে পারছে না। তবে সরকার সে দেশের দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা করছে, যাতে সীমান্তের বাণিজ্যে স্বাভাবিক হয়।

আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে এমন স্থবির পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় শনিবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গেছেন সরকারের বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এইচ এম শফিকুজ্জামান।

পরিদর্শনকালে তিনি বলেছেন, ‘সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রাখা উচিত না। প্রথম দরকার ওপারের শান্তি, সেটি হলে সীমান্ত বাণিজ্যে আগের রূপ ফিরবে। মিয়ানমার আমাদের পার্শ্ববর্তী, বিকল্প বাণিজ্যের ধার উন্মোচন হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোবাইল ইন্টারনেটে ‘প্যাকেজ শর্ত’ তুলে দিল বিটিআরসি
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে ‘ব্যবসা বাড়ানোর আগ্রহ’ পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের