আগামী মাসেই চালু হচ্ছে দশটি স্লুইচ গেট। নেদারল্যান্ডস থেকে গেট এনে স্থাপন করা হচ্ছে নগরীর মহেশখালসহ দশটি খালে। এরমধ্যে পাঁচটি গেট বিশেষ ধরণের মরিচা প্রতিরোধী মেটালে তৈরি, অপর পাঁচটি সাধারণ লোহায়। স্লুইচ গেটগুলো পুরোদমে চালু হলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরমধ্যে পাঁচ হাজার ছয়শ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। অপরদিকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সেনাবাহিনীর মেগা প্রকল্পে স্লুইচ গেট রয়েছে ৫টি, অপরদিকে সিডিএর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিতে স্লুইচ গেট রয়েছে ১২টি।
সূত্র জানিয়েছে, স্লুইচগেটগুলোর আরসিসি কাজ সম্পন্ন হলেও গেটের জন্য চালু করা সম্ভব হচ্ছিল না। সবগুলো গেটই আনা হচ্ছে নেদারল্যান্ডস থেকে। শুরুতে গেটগুলো কাস্ট আয়রণ দিয়ে বানানোর কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন যে, কাস্ট আয়রণে মরিচা ধরে। বছর কয়েকের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যায়। এতো টাকার একটি প্রকল্পে গেটগুলো কাস্ট আয়রণে না দেয়ার জন্যও বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন। তারা কাস্ট আয়রণের পরিবর্তে মরিচা প্রতিরোধে মেটাল দিয়ে গেট তৈরির পরামর্শ দেন। এরই প্রেক্ষিতে নন কোরাসিভ মেটাল দিয়ে নেদারল্যান্ডসে গেট তৈরি করা হয়। মেগা প্রকল্পের আওতায় মহেশখালসহ পাঁচটি খালে এই নন কোরাসিভ কম্পোজিট মেটাল দিয়ে তৈরি গেট স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডস থেকে গেটের বেশিরভাগই চলে এসেছে। এগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যেই এসব গেট স্থাপন সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
অপরদিকে সিডিএর প্রকল্পে সর্বমোট ১২টি স্লুইচ গেট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি গেট রয়েছে বেশ বড়। বোট পাসের ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে গেটগুলোতে। এই ধরনের ১২টি স্লুইচ গেটের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫টিতে গেট স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব গেট স্থাপন সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। অপর ৭টি গেট পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে স্থাপন করা হবে। সিডিএর প্রকল্পে স্লইচগেটে কাস্ট আয়রণ দিয়ে গেট তৈরি করা হচ্ছে। নতুন করে নন কোরাসিভ কম্পোজিট মেটাল দিয়ে গেট তৈরি করতে হলে নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় অনুমোদন করাতে হবে। সাধারণ কস্ট আয়রণের সাথে কম্পোজিট আয়রণের খরচের ব্যবধান ক্ষেত্রবিশেষে বিশ পঞ্চাশ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বাড়তি ব্যয় অনুমোদন না করিয়ে কম্পোজিট মেটাল স্থাপন সম্ভব না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে কাস্ট আয়রণের গেট স্থাপন করা হচ্ছে। পরবর্তীতে খরচের ব্যাপারটি অনুমোদিত হলে নতুন করে নন কোরাসিভ কম্পোজিট আয়রণের গেট তৈরি করে স্থাপন করা হবে। আগামী মাসের মধ্যে যেই দশটি স্লুইচ গেট চালু করা হচ্ছে সেগুলোতে পাম্পও স্থাপন করা হবে। বর্ষায় এসব পাম্প ব্যবহার করা হবে। যা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিষয়টি ব্যাখা করতে গিয়ে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীকে বলেন, আগামী বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুফল না মিললেও বেশ ভালোই সুফল পাওয়া যাবে। বিশেষ করে স্লইচগেটগুলো চালু করা হলে বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি একই সাথে নগরীতে যেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তা ঠেকানো যাবে। স্লুইচগেটের সাহায্যে জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকানো হবে। আর বৃষ্টির পানি শক্তিশালী পাম্প দিয়ে বের করে দেয়া হবে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি ফুলে উঠার যেই প্রবণতা গত কয়েকবছর ধরে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা কমে আসবে। তিনি নগরীর জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসনে আর বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এরমধ্যে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে বারইপাড়া খাল খনন। এটি খনন না করা পর্যন্ত নগরীর ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাকলিয়াসহ বিস্তৃত এলাকার জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। তিনি নগরবাসীর সচেতনতাও জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন।