হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর অবিস্মরণীয় ঘোষণা দিলেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে বসে আমি দেখেছি প্রচুর হোল্ডিং ট্যাক্স বাকি। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে অনেক আবেদন এসেছিল। সেগুলো মিটমাট না হওয়া পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স দেওয়া হয়নি। সব আবেদন আমি বাতিল করে আগের হোল্ডিং ট্যাক্সে ফিরে যাব। আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স দিলেই কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করতে পারব। যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন না, কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করতে চাচ্ছেন না তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা দিয়ে দেবেন। তিনি গত শনিবার রাতে নগরের গোল পাহাড় মোড় আমিরবাগ আবাসিক এলাকায় আমিরবাগ আবাসিক কল্যাণ সমিতির দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এসময় মেয়র শাহাদাত বলেন, সততা, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠা যদি থাকে তাহলে এটা অসম্ভব কিছু নয়। প্রথম দিন থেকেই আমি দেনা নিয়ে শুরু করেছি। আমি সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে এ দেনা শূন্যতে নিয়ে আসব।
১১ নভেম্বর দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মেয়র ডা. শাহাদাত চট্টগ্রামের মানুষকে ময়লামুক্ত শহর উপহার দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেখানে কোনো হিংসা–বিদ্বেষ, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি থাকবে না। একটি সুন্দর ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি আমি চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দিতে চাই। ক্লিন মানে শুধু ময়লা পরিষ্কার করবো তা না, মানুষের মনও পরিষ্কার করব। আমি বলেছি, আমার অফিস সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যাতে এ সময়ে আমার অফিসে ভিড় না জমায়। এটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে। আমার দলের নেতাকর্মীরা প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত কর্পোরেশনের আসেনি। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নিয়ে বহু তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে এ নগরে। নতুন করে বারবার তিক্ততার সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ‘পুনর্মূল্যায়নের’ নামে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলে চট্টগ্রাম শহরবাসীর আন্দোলন ও আপত্তির মুখে মন্ত্রণালয় কর্তৃক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন (রিএসেসমেন্ট) প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু এর পরের মেয়র দায়িত্ব নিয়ে স্থগিত করা হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন (রিএসেসমেন্ট) এর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য অথবা ১৯৮৬ সালের আইনের আলোকে নতুনভাবে পুনর্মূল্যায়ন করার অনুমতি দেয়ার জন্য ২ জানুয়ারি ২২ তারিখে মন্ত্রণালয়ে আবেদন প্রেরণ করেন। সেই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে ১৮ জানুয়ারি ২২ তারিখের চিঠিতে ২০১৭ সনের গৃহকর– পুনর্মূল্যায়নের আলোকে গৃহকর আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়।
এরপর হতে জুলাই মাসের শুরু থেকে বর্ধিত গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যে চসিকের ৮টি রাজস্ব সার্কেল থেকে বাড়ির মালিকদের নতুন ধার্য করা গৃহকরের নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। যাতে পূর্বের তুলনায় অস্বাভাবিক গৃহকর ধার্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মূলত এরপর হতেই নগরবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন।
গৃহকর বৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ পর পর কদমতলীতে সমাবেশ করতে থাকেন। সেখানে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বাড়িভাড়ার উপর গৃহকর ধার্য করায় গৃহকর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কোনো সৎ নাগরিকের পক্ষে এত অধিক পরিমাণ কর পরিশোধ করা সম্ভব নয়। কর পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আদি চট্টগ্রামবাসীদেরকে বাস্তচ্যুত হয়ে রোহিঙ্গার ভাগ্য বরণ করতে হবে। এখানে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কিছু নেই। চট্টগ্রামের অর্থনীতি এখনো নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তার উপর অন্যায্য হোল্ডিং ট্যাক্স ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
এ অবস্থায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর ঘোষণায় নগরবাসীর মনে স্বস্তি এসেছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির পক্ষ থেকেও অভিনন্দন জানানো হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আন্দোলন হলেও বিগত সিটি করপোরেশনের মেয়র বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে নগরবাসীর ওপর নতুন নতুন করের বোঝা চাপিয়েছেন। মেয়র ডা. শাহাদাতের এই ঘোষণা তার পরিসমাপ্তি হবে বলে আশা করি।
নগরবাসী মনে করে, প্রকৃতপক্ষে নগর পিতা নগর সেবক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, এলাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব, নানান সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্থাপনার ধরন ইত্যাদি হিসাবে রেখে স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করতে হবে।