সাপ্তাহিক ছুটির সাথে ২১ ফেব্রুয়ারির ছুটি যুক্ত হয়ে টানা ৩ দিন বন্ধ ছিল সরকারি অফিস। ফলে এ সুযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজার ছুটে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। ফলে হোটেল-মোটেলে ঠাঁই না হওয়ায় অনেককে সৈকতেই রাত কাটাতে হয়েছে।
দেখা যায়, কক্সবাজারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। শুক্রবার এ চাপ আরো বেড়ে যায়। চলতে থাকে রোববার পর্যন্ত। আর পর্যটকদের এমন চাপে শহর ও শহরতলী, মেরিন ড্রাইভসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শহরের কলাতলী থেকে বার্মিজ মার্কেট, বাস টার্মিনাল, শহরতলীর লিংকরোড, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক এবং হিমছড়ি থেকে রেজু ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় ৮/১০ কি.মি দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় সড়কে চলাচল করতে ১০ গুণ পর্যন্ত বেশি সময় ব্যয় হয়। ফলে পর্যটকরা তাদের সিডিউল অনুযায়ী অনেক দর্শনীয় স্থান উপভোগ করতে পারেননি। এছাড়া হোটেলে কক্ষ বরাদ্দ না পেয়ে হাজার হাজার পর্যটককে রাত কাটাতে হয়েছে সমুদ্র সৈকত কিংবা রাস্তায় খোলা আকাশের নীচে। রেস্তোরাঁতেও খেতে হয়েছে লাইন ধরে। কোনো সরকারি ছুটিতে অতীতে এত বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে আসেননি উল্লেখ করে ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, দুই দশকের বেশি সময় ধরে পর্যটন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত এই ব্যবসায়ীর মতে, একুশের ছুটিতে কক্সবাজারে ১০ থেকে ১২ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এসএম কিবরিয়া খান বলেন, একুশের ছুটিতে কক্সবাজারে আসা হাজার হাজার পর্যটককে পিঠে অথবা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায় হোটেলের সন্ধানে। কিন্তু আগাম হোটেল কক্ষ বুকিং করে না আসায় প্রতিদিন প্রায় লাখ খানেক পর্যটককে রাস্তায় অথবা সমুদ্র সৈকতে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন।
একই তথ্য জানান কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, কক্সবাজারে এবার নজিরবিহীন সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। লকডাউন আতংক কেটে গেলে কক্সবাজারে পর্যটকদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের সৃষ্টি হবে- তা ছিল আমাদের প্রত্যাশিত। কিন্তু এত জোয়ার আমরা আগে কখনও দেখিনি। তিনি জানান, কক্সবাজারে প্রায় দেড়লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। আর শহরের বাইরে আরো ২০/২৫ হাজার পর্যটকের থাকার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের ভিড়ে গত বৃহস্পতিবার থেকেই সকল কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে যায়।
একুশের বন্ধে কক্সবাজারে পর্যটকদের এমন চাপকে পুঁজি করে গলাকাটা ব্যবসা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কতিপয় হোটেল মালিক, কক্ষ দালাল ও পরিবহন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। পর্যটকরা জানান, অনেকেই হোটেল কক্ষ ভাড়া ৩/৪ গুণ ও গাড়ি ভাড়া দুই তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
গাজীপুর থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা ফুয়াদ, কামাল, রাসেল, বাবুল, নজরুল শনিবার জানান, তারা আগের দিন কক্সবাজারে এসে গভীর রাত পর্যন্ত হোটেলে কক্ষ খুঁজেছেন। পরে ৫ হাজার টাকায় একটি কক্ষ ভাড়া নেন। তবে তাদের সাথে আসা আরেকটি দল হোটেল কক্ষ না পেয়ে সৈকতেই রাত কাটিয়েছে বলে জানান।
এদিকে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আকস্মিক বিপুল সংখ্যক মানুষ আসায় যানবাহন সংকটে পড়েন স্থানীয়রা। অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই কর্মস্থলে গেছেন। সামাজিক সংগঠন কক্সবাজার পিপল্স ফোরামের সভাপতি বলেন, পর্যটকদের কক্সবাজারে বেড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। কিন্তু তারা যে সময়ে আসছেন সেসময়ে আমাদের তাদের হোটেল দিতে পারছি না, গাড়ি দিতে পারছি না, যানজটমুক্ত রাস্তা দিতে পারছি না। এতে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, একই সঙ্গে ৫/১০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসায় যানবাহনের চাপে শহর ও শহরের বাইরে যে যানজট তৈরি হয় তা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি টুরিস্ট পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়। তবে গতকাল রাত থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।