হেমাঙ্গ বিশ্বাস (১৯১২–১৯৮৭)। উপমহাদেশের গণসংস্কৃতি আন্দোলনের প্রবাদ প্রতীম শিল্পী। তিনি ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের মিরাশী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই লোকসঙ্গীত গাইতেন এবং লোকসঙ্গীত নিয়ে ভাবতেন–চর্চা করতেন বলেই লোকসঙ্গীতে অসামান্য দখল ছিল তাঁর। প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করতেই তিনি গান রচনা করেছেন, সুর দিয়েছেন এবং গেয়েছেনও। হবিগঞ্জ মিডল ইংলিশ স্কুল এবং ডিব্রুগড়–এর জর্জ ইনস্টিউটে শিক্ষা শেষে হবিগঞ্জ সরকারি স্কুল থেকে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রিক পাশ করে ভর্তি হন শ্রীহট্টের মুরারীচাঁদ কলেজে। এসময় তিনি জড়িয়ে পড়েন স্বদেশী আন্দোলনে। এই কারণে তাঁকে ৬ মাস কারাভোগ করতে হয় এবং বহিষ্কৃত হতে হয় কলেজ থেকে। স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ততার কারণে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় গ্রেফতার হয়ে একটানা প্রায় তিন বছর কারাভোগ করতে হয়। তখনই আক্রান্ত হন মারাত্মক যক্ষ্মা রোগে। বন্ড দিয়ে জেলমুক্তির নানা প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। কংগ্রেসের অহিংস নীতির প্রতি আস্থা–বিশ্বাস হারিয়ে মার্কসবাদী রাজনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতাস্থ সোভিয়েত কনস্যিলেটে তাঁর চাকরী হয়। চীনের প্রতি তাঁর অতি আকর্ষণ এবং সোভিয়েত পার্টির সমালোচনার কারণে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত কনস্যুলেট থেকে চাকরিচ্যূত হন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে নকশাল বাড়ি আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন দেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে হেমাঙ্গ বিশ্বাস গঠন করেন ‘মাস সিঙ্গার’ নামক গানের দল। এবং আমৃত্যু এই দল নিয়েই ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ–বিদেশ। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘জন হেনরির গান’, ‘শঙ্খচিলের গান’, ‘ফুলগুলি কোথায় গেল’, ‘তোমার কাস্তেটারে দিও জোরে শান’, ‘তোর সোনার ধানে বর্গী নামে’, ‘মাউন্টব্যাটেন মঙ্গলকাব্য’ প্রভৃতি। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।