হেফাজতের সম্মেলন ঘিরে ভাঙনের সুর

আগামী রোববার কাউন্সিল হাটহাজারী মাদ্রাসায়

বিডিনিউজ | শুক্রবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতে ইসলামের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে যে সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে, তার কোনো বৈধতা নেই বলে দাবি করছে একটি পক্ষ। এই কাউন্সিলকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম আর থাকবে না বলে মনে করছেন প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর অনুসারীরা। আগামী রোববার সকালে হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় কাউন্সিল আহ্বান করেছে এক পক্ষ। এতে সারাদেশের জেলা প্রতিনিধিসহ প্রায় পাঁচশ’ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানিসহ অনুসারীরা কাউন্সিলের দাওয়াত পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিনিধি সম্মেলন হলেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন জ্যেষ্ঠ আলেমদের ১৫ জনের শুরা কমিটি। এতে হেফাজতে ইসলামের আমীর ও মহাসচিব নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া অন্য কয়েকটি শীর্ষ পদেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন নাজিরহাট আল জামিয়া আল আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসার শুরা সদস্য ও ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর মামা। হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘প্রতিনিধি সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘যিনি (মহিবুল্লাহ বাবুনগরী) কাউন্সিল আহ্বান করেছেন, তিনি হেফাজতের কেউ নন। তিনি তো হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, এমনকি হেফাজতের বিরুদ্ধেও বক্তব্য দিয়েছেন।’ কাউন্সিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এই কাউন্সিলের কোনো বৈধতা নেই। একটি পকেট কমিটি হবে। হেফাজতে ইসলামের যে ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তা বিনষ্ট হয়ে যাবে। একটা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এই কাউন্সিল করা হচ্ছে।’
কওমী মাদ্রাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি ও প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ায় অভ্যন্তরীণ বিরোধে দুই বছর আগে হেফাজতের নায়েবে আমির পদ ছেড়েছিলেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। কাউন্সিল আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫১ জনের। তারা বাকি লোক কোথায় পেলেন? তাদের খাতিরের লোকজনকে দাওয়াত দিয়েছে।
বলা হচ্ছে, দেশের শীর্ষ আলেমদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের শীর্ষ আলেমরাই তো দাওয়াত পাননি। যে ছয়জন কাউন্সিল আয়োজনের কাজ করছেন বলে জেনেছি তাদের মধ্যে চারজন চট্টগ্রাম মহানগর বা উত্তর, দক্ষিণের কেউ না। তাই তাদের অনুসারীরাই আমন্ত্রণ পাবে।’
সম্মেলনে আনাস মাদানীসহ তার অনুসারীরা দাওয়াত না পেলেও প্রয়াত শফীর বড় ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রয়াত আমির আহমদ শফীর অনুসারী ও চরমোনাইর পীরের অনুসারীদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ মাঈনুদ্দীন রুহীর।
আজিজুল হক ইসলামীবাদীর কাছে মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। উনি নায়েবে আমির আছেন। নেতৃত্ব নির্বাচনে আমাদের কোনো ভোটের পদ্ধতি নেই। সবার মতামত নিয়ে তারপর শুরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কোনো পদে কেউ প্রার্থী নেই। শুরাই আলোচনা করে ঠিক করবে, কে কোন পদ পাবেন।’
হেফাজত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে জোর গুঞ্জন নতুন আমির পদে জুনাইদ বাবুনগরীকে চান তার অনুসারীরা। আর মহাসচিব পদে বর্তমান নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমীর নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। আহমদ শফীর অনুসারী মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘শুনছি তারা নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করতে চান। আর জুনাইদ বাবুনগরী নিজেই আমির হতে চান। নায়েবে আমির যদি নিজেই মহাসচিব হন, তাহলে সংগঠনের চেইন অব কমান্ড তো থাকবে না। নূর হোসাইন কাসেমী ২০ দলীয় জোটের এক দলের নেতা। হেফাজতের গঠনতন্ত্রে আছে, দলীয় কেউ মহাসচিব হতে পারবে না।’ নূর হোসাইন কাসেমী ২০ দলীয় জোটের অংশীদার জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদেশি নেতাদের শুভেচ্ছা বার্তা নিতে বাইডেনকে বাধা
পরবর্তী নিবন্ধহালদায় ফিরছে সুদিন