টোনাটুনির গল্পে পিঠা বানানোর কথা অনেক শুনেছি। সেই যে পিঠা বানানোর প্রস্তুতি, টোনা বাজার থেকে চাল আনল, গুড় আনল। টুনি আগুন জ্বালাল। পিঠা বানানোর আয়োজন করল…
পৌষের হিমে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে। শীত চলে গেছে। এ সময়ের এক বিকেলে কংক্রিটের এই শহরে যে ভাপা, নকশি আর পাটিসাপটাসহ বাংলার বৈচিত্র্যপূর্ণ রকমারি পিঠার আয়োজন হতে পারে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল গতকাল থেকে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের প্রশিক্ষণ মাঠে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় পিঠা উৎসব ২০২১-এ।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় গতকাল থেকে ১৩ মার্চ ৫ দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আজ বুধবার বিকাল ৪টায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন ম. হামিদ। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এছাড়া উৎসবে প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
১২ বছর ধরে ঢাকায় বর্ণাঢ্য পরিসরে জাতীয় পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার চট্টগ্রামে হচ্ছে জানিয়ে জাতীয় পিঠা উৎসব চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু আজাদীকে বলেন, প্রথমবারের আয়োজনে আমরা দারুণ সাড়া পেয়েছি। আগামীতে পিঠার মৌসুম শীতে এ আয়োজন নিয়মিত করার ইচ্ছে আছে।
তিনি বলেন, আগে শীতে গ্রামে-গঞ্জে নতুন ধানের চালের গুঁড়ো দিয়ে রকমারি পিঠা-পুলি তৈরি হতো এবং উৎসবের ধুম পড়ে যেত। দুঃখের বিষয়, নাগরিক জীবন থেকে পিঠা-পুলি প্রায় মুছে গেছে। আবহমান বাংলার সুস্বাদু পিঠাগুলোকে নগরজীবনে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে দেয়ার জন্য এ আয়োজন।
উৎসবে চট্টগ্রাম মঞ্চ সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা স্টল দিয়েছে। এর কারণ প্রসঙ্গে সংস্থার সভাপতি শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের আজাদীকে বলেন, পিঠা উৎসব সত্যিকার অর্থে আমাদের লোকজ সত্তার প্রতিনিধিত্ব করে। এর সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক।
‘সমমনা’ নামে স্টল দিয়েছেন দুই বান্ধবী লিপি বড়ুয়া ও মনিরা। লিপি বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, এই পিঠা উৎসবে ৩২টি স্টলে যে সকল নারী রকমারী পিঠার ডালি সাজিয়েছেন তারা একদিন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। এ প্রজন্ম এ বিষয়ে কখনো ইন্টারেস্ট দেখায় না। ডেজার্টের প্রতি ক্রেজ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের। পিঠার প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
উৎসবে অংশ নেওয়া স্টলগুলোর টেবিল জুড়ে থরে থরে সাজানো বাহারি পিঠা। কী নেই সেখানে? নানারকম পিঠার মধ্যে ছিল পাটিসাপটা, মালপোয়া, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল পিঠা, বিবিখানা, নারকেলের ভাড়াপুলি, চাঁদ পাকন, ভেজিটেবল ঝাল, ভাপা, পুলি, নারিকেল পুলি, পাটিসাপটা, লাল পাটিসাপটা, পাকন, ফ্রায়েড মেমো, গোলাপ, হৃদয় হরণ, শঙ্খ, স্পঞ্জ, গোকুল, ম্যারা, মিষ্টিপুলি, পায়েস রোল, সেমাই, রস, নকশি, দুধ কুশলি, কমলা, পেয়াজু, গাজরের মিষ্টিপান, সুজি, ডিমের ঝাল পাটিসাপটা, নুডলস পাকৌড়া, চিতই, মনমহিনী, খাস্তা, তেল, তালের, খির চমচম, খেজুর, দুধপুলি, পুতুল, জামাই, বিস্কুট, রসে ভেজা সূর্যমুখী, তালের পিঠাসহ রকমারি স্বাদ ও নকশার পিঠা। এ যেন পিঠাদের মিলনমেলা। সাথে আছে ঘরে তৈরি আচার ও খেজুর গুড়। চালের গুঁড়ো শুধু নয়, মসুর ডাল, মুগ ডাল কিংবা গাজর দিয়েও যে পিঠা তৈরি হতে পারে, তা দেখা গেল বিভিন্ন স্টলে। সাথে আছে মেজবানি মাংস, হাঁসের মাংস, আছে জাদুর বিভিন্ন সামগ্রীর স্টলও।
উৎসবে অংশ নেওয়া স্টলগুলো হলো এঞ্জেলা ক্যাটারিং, সমমনা, নুর, এম এন কালেকশন, চট্টল ফুড, অপরাজেয় কুমুদিনীর আপ্যায়ন, চট্টগ্রাম মঞ্চ সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, দ্যা মম’স শপ, আরণ্যক, মারিয়া জিদান, রাজশ্রী পিঠা শপ, উচ্চারক আবৃত্তি কুঞ্জ, হেভেন’স ফুড, মুনতাহা পিঠা শপ, টেস্ট অব চাটগাঁ, মনিরা’স ফুড ফ্যাক্টরি, পিঠা পণ্ডিত, আর এম ফুড ফ্যাক্টরি, ইট পিউর বিডি, এস কে এন্টারপ্রাইজ, নুরাইন’স ডাইন, দেশি ইজহার, ঘরোয়া, নারী উন্নয়ন মঞ্চ, নোয়াখালী পিঠা ঘর, মিত্র’স ক্যাটারিং, খাবার ঘর, মানিকগঞ্জ পিঠা ঘর, আমন্ত্রণ, মা ফুডস, কফি হাউজ, নাবিলা ভৈরব পিঠা ঘর ও ফ্যান্টাসিও ম্যাজিক শপ।